রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৩

বেলাভূমি


প্রকৃতি তার হৃদয়ে অগণিত রহস্য আর বিস্ময় সঞ্চয় করে রেখেছে আমাদের জন্য। আমরা মানুষেরা কখনই প্রকৃতির সব নিয়ম জানতে পারব না, কারণ প্রকৃতি তা জানতে দিতে চায় না কেননা এতে সৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে । কিন্তু মানুষ অনুসন্ধান করে চলেছে, প্রকৃতির হৃদয়ের কথাটি উন্মোচন না করে সে যেন ক্ষান্ত হবে না।

এজন্যে মানুষকে প্রথমে অসীম দূরত্বকে জয় করতে হবে, জানতে হবে সময়ের রহস্য এবং স্থানের ডাইমেনশনের বিস্ময়। ড.নির্ঝর দীর্ঘদিন ধরে স্থানের ডাইমেন নিয়ে কাজ করছেন, মানুষ যে দিন ডাইমেনশনের রহস্য উৎঘাটন করতে পারবে সেদিন সে সময়ের বুকে নির্মাণ করবে এক সুপ্রশস্ত মহাসড়ক যেটা ধরে সে চলে যাবে মহাশুণ্যের যে কোন স্থানে। ড. নির্ঝর বিশ বছর ডাইমেনশনের রহস্য উৎঘাটনের প্রচেষ্টায় রত রয়েছেন, তিনি এমন একটি মহাযন্ত্র নির্মাণের  প্রচেষ্টায় নিয়েজিত রয়েছেন যা তাকে নিয়ে যাবে পর্দার ওপাড়ের পৃথিবীতে। তল শন্দটি ডাইমেনশনের বিকল্প নয় কিন্তু সহজ করে বোঝার প্রয়োজনে আমরা এটা ব্যবহার করতে পারি। আমরা জানি যে একটি ইটের ছয়টি তল রয়েছে, এগারটি তলের কথা আমরা সুস্পষ্টভাবে জানি কিন্তু গণিতজ্ঞগণ অসংখ্য তলের কথা বলেন। কিন্তু এটা সত্যই যে আমরা তলকে সংখ্যার হিসেবে প্রকাশ করতে পারিনা।
প্রকৃতি তার অভ্যন্তরে কতগুলো তল লুকিয়ে রেখেছে তা আমরা জানি না হয়তো কোনদিনই জানবো না। কারণ প্রকৃতি তার সব নিয়ম মানুষকে জানতে দেবে না।

বাস্তব জগতের কোন উদাহরণ দ্বারা আমরা  ডাইমেনশনকে পুরো মাত্রায় বুঝতে পারি না, যেমন ঘড়ির সময় দেখে মহাজাগতিক সময়ের রহস্য জানা যায় না তথাপি অনুধাবনের প্রয়োজনে বাহ্য কিছু উদাহরণ সহায়তা করে থাকে। ইটের ছয়টি তল, প্রতিটি তল বা স্থান একটি অপরটির থেকে পৃথক, অথচ তারা একটি বস্তুতে বর্তমান। যদি ছয়টি ক্ষুদ্র প্রাণী ছয়টি তলে বসে থাকে তবে তারা পরস্পরের কাছে অদৃশ্য হয়ে থাকবে কিন্তু তারা পাশাপাশি অবস্থান করছে। আর একটি উদাহরণের দ্বারা বিষয়টি বোঝা যেতে পারে, ধরা যাক একটি লোক নৌকায় বসে রয়েছে , তার নিচে গভীর জলরাশি, সেই জলবাশির নিচে রয়েছে আর একটি দুনিয়া যেখানে রয়েছে অসংখ্য জীবজন্তু। বিশাল অদৃশ্য দুনিয়াটি নৌকার লোকটির চেয়ে বড় তারপরও সেটা দৃষ্টির আড়ালেই রয়েছে কিন্তু তার অস্বিত্বকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। একটা মহাজাগতিক পর্দা আমাদের দুনিয়াকে অপরাপর বিশ্ব  থেকে আলাদা করে দিয়েছে। আমরা যেন বোতল বন্দী একটি পোকা যে তার বোতলটিকেই মহাবিশ্ব ভেবে মহাতৃপ্ত। যে জানে না সে মূলত প্রকৃতির গোলক ধাঁধার আবর্তে রয়েছে। সে যদি বোতলের গায়ে একটা ছিদ্র করতে পারে তবে সে ভিন্ন একটা ডাইমেনশনে পৌঁছবে যেটা তার বিশ্ব থেকে ভিন্ন একটা বিশ্ব । ড.নির্ঝর তার সহকর্মিনী জেরিনকে বললেন, আমার বিশ বছরের সাধনা সমাপ্ত হতে  চলেছে। মানব জাতির জন্য এটা একটা বড় অর্জন। এর মাধ্যমে তারা সময়কে জয় করবে, স্থানকে জয় করবে। একে একে তারা সকল ডাইমেনশন গুলোকে জানবে আর নিজের ছোট ঘরের ভেতরেই আবিষ্কার করবে ভিন্ন ভিন্ন জগত। প্রকৃতি আমাদের চোখের সামনে ঝুলিয়ে রেখেছে একটা অদৃশ্য পর্দা সেই পর্দাটির মধ্যে যদি একটা ছিদ্র করা যায় এবং চোখ রাখা যায়  তবে দেখতে পাব আরো অসংখ্য জগত।
জেরিন বললেন, আমি এখনো ডাইমেনশন জিনিসটি বুঝতে পারিনি। সেই অদৃশ্য পর্দাটি কোথায় খুঁজে পারেন আপনি । এটা যেন ভবিষ্যতে যাবার চেষ্টা, যে দরজা প্রকৃতি বন্ধ করে রেখেছে। স্টিফেন হকিং এর কথা স্মরণ করুন, তিনি  বলেছেন,  আমরা অতীত বা   ভবিষ্যতে যেতে পারব না। সেটা  কখনই সম্ভব নয়। 
আমি ভবিষ্যতে যেতে চাই না। ড. নির্ঝর বলেলেন, ভিন্ন জগতে যেতে চাই। গাণিতিক সমস্ত হিসেবে আমি সম্পন্ন করে এনেছি। আমার এই বিশাল যন্ত্রটা  থেকে নির্গত রশ্মি একটা ওয়ার্ম হোল খুঁজে নেবে, সেই ওয়ার্ম হোলের মধ্য দিয়ে এটা আমাকে পাঠিয়ে দেবে আলাদা একটা জগতে, হয়তো সেই জগতটা এই ঘরেই রয়েছে, হয়তো বিশ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ডায়নোসররা এখনো চরে বেড়াচ্ছে আমাদের এই ঘরেই। তারা বেঁচে থাকতে পারে কারণ তারা আমাদের পৃথিবীতে নয় ভিন্ন কোন পৃথিবীতে রয়েছে।
জেরিন বললেন, আপনার এই আজব যন্ত্রটা দেখে আমি ভীত, বছরের পর বছর এটা নির্মানে আপনার সঙ্গ দিয়েছি, এটা না  জেনে যে এটি আসলে কি কাজে দেবে, সময় ভ্রমনের এমন একটা যন্ত্র আমরা তৈরি করেছি যেটা কোনদিন কাজ করবে না, কারণ কল্প কথায় যা হয়  বাস্তবে তা হয় না।
জেরিন আরও বললেন , ওয়ার্ম হোলের বিষয়ে পৃথিবীর সকল বিজ্ঞানী এখনো নিশ্চিত নন, এটা এখনো প্রাক্-তত্ত্ব  পর্যায়ে রয়েছে । ওয়ার্ম হোলের  খোঁজে  এমন একটা যস্ত্রে  উঠে বসা উচিত নয় যেটা আপনাকে মেরে ফেলতে পারে, এর রেডিয়েশন আমরা জানি না কতটা প্রভাব ফেলবে। আমরা আরও ধৈর্য ধরতে পারি।
ড.নির্ঝর বললেন, আমি চাইনা আমার পূর্বে আর কেউ এই বিশাল আবিষ্কারের সম্মান পায়, আমি জানি পৃথিবীর অনেক দেশের বিজ্ঞানীরা ওয়ার্ম হোল অনুসন্ধানে অনেকটা এগিয়েছে।
 জেরিন বললেন, ভেবে পাই না, এই ঘরের ভেতরে আপনার যন্ত্রগুলো ওয়ার্ম হোল খুঁজে পাবে কিভাবে ? এটা পাগলামি ।
--এর রশ্মিগুলো ছুটে যাবে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূর পর্যন্ত। বক্র হয়ে যাওয়া স্থানের মধ্যে ওরা সীমাহীন দূরত্ব অতিক্রম করবে কিন্তু রশ্মিগুলো ঘরের মধ্যেই আবদ্ধ থাকবে। হাজার মাইল দীর্ঘ একটা কাপড়কে যেমন ছোট্ট একটা জায়গায় আবদ্ধ  করে রাখা যায়, স্থানও তেমনি বক্র। তাই ছোট্ট একটা স্থানেই একাধিক জগত থাকতে পারে। হয়তো আকাশের তারাগুলো আমাদের অনেক কাছেই রয়েছে, হয়তো তোমার আমার মধ্যবর্তী দূরত্বের চেয়েও ওদের দূরত্ব কম। হতে পারে তুমিই তারাদের  চাইতে বেশি দূরে রয়েছ। বক্রস্থান আমাদের নিকটবর্তী করেছে।  ড. নির্ঝর তার যন্ত্রটি শেষবার পরখ করে নিতে নিতে বললেন ,ফলাফল যাই হোক প্রচেষ্টার জন্য মানুষ আমাকে মনে রাখবে। হয়তো তুমিও ভুলবে না।
 ড.নির্ঝর যন্ত্রে উঠে বসলেন, শেষবারের মত দেখে নিলেন তার চারপাশটা, এটাই শেষ, মূত্যুকেই হয়তো তিনি বেছে নিলেন বিজ্ঞানের এমন একটা তত্ত্বের জন্য যা এখনো প্রমাণিত নয়।
আর একটা কথা, তুমি কিন্তু বেশ মেয়ে,তুমি শুধু কাজ করনি আমাকে ভালবেসে এসেছ।
--হ্যাঁ,ভিন্ন ডাইমেনশনের ভালবাসা সেটা।
ড. নির্ঝর হেসে বললেন, হ্যাঁ তাই।
ড.নির্ঝর যন্ত্র থেকে নেমে এসে জেরিনের  হাত ধরলেন, তার সজল চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, মূত্যু বলে কিছু নেই, আমরা হলাম বেলাভূমিতে পড়ে থাকা পাথরের মত, যেখানে ছুঁড়ে ফেলবে, সেখানেই সে অবস্থান করবে। আমিও মহাশুন্যের বেলাভূমির কোথাও না কথাও থাকবো। হয়তো থাকবো তোমার নিকটেই অথবা কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে।
ড. নির্ঝর যন্ত্রটায় উঠে বসলেন, চালিয়ে দিলেন সেটা,চোখের অদৃশ্য রশ্মিগুলো ছুটে গেল শত শত আলোকবর্ষ ব্যাপী দীর্ঘ পথ। একটা ওয়ার্ম হোল খুঁজে পেল তারা, ড. নির্ঝর সেই পথে চলে গেলেন ভিন্ন একটা দুনিয়ায়। যন্ত্রটা থেমে গেল, জেরিন শুণ্য আসনটার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
তবে সবকিছুই মিটে গেল, জেরিন ভাবলেন, ড. নির্ঝর এখন কোথায়! এখানেই অথবা ছায়াপথের অন্য কোন গ্রহে নাকি আরও দূরে ভিন্ন কোন গ্যালাক্সিতে। অথবা তিনি পৃথিবীর প্যারালাল কোন পৃথিবীতে পৌঁছে গেছেন যেখানে মানুষ এখনো আদিম পর্যায়ে রয়েছে অথবা ডায়নোসরদের মাঝে বিপন্ন  অবস্থায় রয়েছেন, একটা আশ্রয়ের জন্য হণ্যে হয়ে ঘুরছেন। অথবা মহাশুণ্যে শিলাখন্ডের মত জড় পদার্থ হয়ে ভাসছেন।
জানি না, জেরিন বললেন। রাত্রি হয়ে এলে তিনি বাড়ির ছাদে এসে দাঁড়ালেন, অগণিত তারা জ্বলছে আকাশে। ড. নির্ঝর এখন কোথায়! কেউ জানে না। জেরিন ড. নির্ঝরের কথাটি সশব্দে বললেন, আমরা সবাই বেলা ভূমির পাথরের মত, কোথাও না কোথাও আমরা অবস্থান করি।


আরো পড়ুন--

সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

লোকায়ত দর্শন-চার্বাক


দেব নাথ


বলা হয় ভারতবর্ষ আধ্যাত্মিকতার দেশ এই সব আধ্যাত্মিক চিন্তার কিছু স্থানিক আর কিছু বিদেশাগত, আধ্যাত্মিকতার সুফল আমরা পেয়েছি-এর বেশিটাই ফলেছে শিল্প সাহিত্য সাংস্কৃতিক মননশীলতায় আবার শত শত বছর ধরে এর কুফল গুলোও বহন করে চলতে হচ্ছে আমাদের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার তার একটি, এতে রাজনীতি বিকশিত হয় না আর ধর্মও হয় কলুষিত; ধর্মীর খুঁটি ব্যতীত আমরা কোন কিছুই ব্যবহার করতে পারি না, এর  অনেক কারণ বিশেষজ্ঞগণ নির্দেশ করতে পারেন তবে এর অন্যতম একটি কারণ হল বাংলাদেশের অবস্থœান ভারতবর্ষ তথা পৃথিবীর প্রান্তে বিদেশাগত সকলজনগোষ্ঠী এতদূরবর্তী স্থানে আসতে চায়নি, আর্যগণ ভারতবর্ষে ১৫০০ খ্রি. পূ. প্রবেশ করেছেন বলে অনেেেক মনে করেন কিন্তু বাংলাদেশ পর্যন্ত তারা পৌঁছেছেন আরো এক হাজার বছর পরে , সেটা  **চতুর্থ খ্রি. পূ. এর দিকে বলে অনেকে মনে করেন বাংলাদেশের পশ্চাদপদতার এই এক বড় কারণ , রিজলের মত ঐতিহাসিকগণ এমনটাই মনে করেন বাহিরের জ্ঞান এখানে সর্বদা দেরিতে এসেছে, যা আমরা পেয়েছি তাও ছিল সীমিত, সময়ের সাথে সাথে তা আরো সীমিত হয়ে গিয়েছে আর এদেশের মানুষ কখনো বর্হিগামিও হয়নি;এদেশের শীতল আবহাওয়া, ঊর্বরভমি মানুষকে করেছে শান্তিপ্রিয়, আধ্যাত্মিক, অলসও বটে আর এই প্রকৃতির দানের মূল্য আমরা দিয়ে চলেছি যুগে যুগে এটা আশ্চর্য যে , যেসব জাতি এখানে বিজয়ী বেশে প্রবেশ করেছে তারাও সময়ে তেজ হারিয়ে ফেলেছে, যোদ্ধা থেকে তারা কবিতে পরিণত হয়েছে আর আধ্যাত্মিক চিন্তাকে তারা যত সহজে গ্রহণ করেছে অন্য কোন চিন্তাকে অতটা সহজে গ্রহণ করেনি কিš ¯Íবাদী চিন্তারও বিকাশ এখানে হয়েছে চার্বাক দর্শন তার একটি, ¯ দর্শনগুলো পূর্ণ বিকশিত না হওয়ার জন্যে সমাজ বিকাশও হয়েছে এক পেশে, আংশিক ধর্মের উন্মাদনা অনেকের মধ্যে থাকলেও ধর্মীয় সততা বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে নেইঅপর দিকে বস্তু দর্শন মানুষ গ্রহণ করেনি শুধু নয়, ধ্বংসও করেছে চার্বাক দর্শন তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ
আজ চার্বাক দর্শনের কথা আমাদের শুনতে হয় অন্য কথকের মাধ্যমে, অনেকে চার্বাক দর্শনকে পরিপূর্ণ দর্শনের মর্যাদা দিতে চান না কিন্তু এটা সত্য নয় প্রথমত: চার্বাক দর্শনের মূল কোন পুস্তক পাওয়া যায়নি দ্বিতীয়ত: অপর যে সব শাস্ত্রে চার্বাক দর্শনের কথা পাওয়া যায় তাও পূর্ণাঙ্গ নয় বলেই ধরণা করা যায়
ঋগবেদ থেকে শুরু করে রামায়ণ, মহাভারত, ত্রিপিটক, মৈথিলি উপনিষদ, বিষ্ণপুরাণ, জৈন শাস্ত্র-এর মধ্যে চার্বাকদের সম্পর্কে বক্তব্য পাওয়া যায়, বলাই বাহল্য তার সবই নেতিবাচক এটা অবশ্য চার্বাকদের শক্তিশালী অবস্থানের কথা মনে করিয়ে দেয় পরবর্তীতে তাদের জনবিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, তাদের লিখিত পুস্তক নষ্ট করা হয়েছে বস্তুবাদী দর্শন বলতে ইউরোপের কথাই সবার মনে পড়ে, কিন্তু ভারতবর্ষের বস্তবাদ যে তাদের অগ্রবর্তীÑ এটা আমাদের কখনই আশ্বস্ত করে না কারণ এতে ধর্মনাশের আশংকা বিদ্যমান
ভারতীয় দর্শনগুলো মূলত ধর্মকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে, মানুষের ধর্ম বিশ্বাসকে পথ করে দেওয়াই ছিল এসব দর্শনের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু চার্বাক দর্শন লতার মত কোন আশ্রয় আঁকড়ে ধরেনি বরং সেটা স্বয়ং মহীরুহের মত দাঁড়িয়ে ছিল
ভাববদীদের চাপে চার্বাক দর্শন তার স্বতন্ত্র অবস্থান হারিয়ে ফেললেও তা একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়নি, লোক সমাজে সব সময়ই এটা বর্র্তমান ছিল, হয়তো লোক সমাজেই হয়েছিল এর উদ্ভব সহজিয়া, বাউল, তন্ত্র, প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মধ্যে  চার্বাক দর্শনের প্রভাব রয়েছে
ভারতীয় দর্শন গুলোকে মোটাদাগে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়; এর একটি আস্তিক্যবাদী দর্শন অপরটি নাস্তিক্যবাদী দর্শন সাংখ্য, যোগ , ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা, বেদান্ত এই ছয়টি হল আস্তিক্যবাদী Ñষড়দর্শন চার্বাক, জৈন, বৌদ্ধ দর্শন হল নাস্তিক্যবাদী Ñত্রৈয়ী দর্শন এর মধ্যে চার্বাকই হল শতভাগ বস্তবাদী দর্শন, অপর দুটি দর্শন নাস্তিক্যবাদী হলেও ভাববাদের প্রভাব সম্পূর্ণরূপে কাটিয়ে উঠেেত পারেনি চার্বাক এসব দর্শনের পূর্বগামী হলেও বস্তুর বাইরে চিন্তা করেনি , প্রমাণ ব্যতীত যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের তারা ছিলেন বিরোধী
বহুল আলোচিত একটি পুস্তকের বিষয়ে বলাটা এখানে প্রাসঙ্গিক হবে আশা করি *বইটির নামসিদ্ধার্থ লেখক হেরমান হেস অসাধারণ শিল্পগুণ সম্পন্ন বইটিতে হেরমান হেস মূলত বৌদ্ধ দর্শন তথা ভারতীয়  ভাববাদী দর্শনের সমালোচনা করেছেন বিষয়বস্ত এখানে সংক্ষেপে প্রণিধানযোগ্য ব্রাহ্মণপুত্র সিদ্ধার্থ--ধার্মিক, সদাচারী ,অনুসন্ধিৎসু তিনি সন্যাস নিয়ে সত্যের সন্ধানে বেরিয়ে পরলেন অনুসন্ধান করতে থাকলেন একজন উপযুক্ত গুরু এবং জীবনবাদী একটি দর্শনের কিন্তু গুরুগণ তাকে যা শেখালেন তাতে তিনি তুষ্ট হলেন না মোটেই; তিনি তার বন্ধুকে বললেনÑ তপস্যা কি?-প্রাণায়ামে কি হয়? এগুলোশুধু নিজের কাছ থেকে পালাবার চেষ্টা, অহং এর যাতনা থেকে সাময়িক পলায়নের চেষ্টা এটা হল গাড়োয়ানের ধেনো মদ পান করে কষ্ট ভোলার চেষ্টার মত
এভাবে সিদ্ধার্থ আচার সর্বস্ব ব্রাহ্মণ্য সংস্কারকে পেছনে ফেলে এলেন, তারপর সিদ্ধার্থ জনশ্রুতির দ্বারা চালিত হয়ে গৌতমবুদ্ধের নিকট এসে উপস্থিত হলেন,বুদ্ধের কৃচ্ছ্রসাধনের নীতিও তুষ্ট করতে পারল না তাকে আবার সামনে এগিয়ে চলা স্বগতোক্তি করলেনÑএই দৃশ্যমান জগৎকে মায়া বলে উড়িয়ে দিয়েছি, নিজের চোখ জিহ্বাকেও বিশ্বাস করতে পারিনিআবার চারিদিকে তাকিয়ে দেখলেন সিদ্ধার্থ যেন পৃথিবীকে এই প্রথম দেখছেন পৃথিবী কত সুন্দর আর রহস্যময়, কিন্তু সিদ্ধার্থের নিকট অপরিচিত কত রঙের সমারোহ,-নীল, সবুজ, হলুদ; আকাশ, নদী, বন, পর্বত, Ñসব সুন্দরময়, মনোমুগ্ধকর
এভাবেই সিদ্ধার্থের পুর্নজন্ম হল ধর্মের কৃত্রিম আচারানুষ্ঠানের পথ অগ্রাহ্য করে  জীবনকে র্জীবনের  পথে ছেড়ে দিলেন নদী পর্বত ত্যাগ করলে তার থাকে কেবল গতি, বৈচিত্র,আর জীবন চার্বাক দার্শনিকগণও এমনি একটি জীবন দর্শনের কথা বলেছিলেন, তারা জীবনকে করেছিলেন জীবন মুখী, সকল প্রকার ধবিশ্বাস , সংস্কার থেকে মানুষকে মুক্ত করেছিলেন
তারা মানুষকে রাক্ষস বৃত্তি অবলম্বন করতে বলেননি, বলেছিলেন জীবনবাদী আর বস্তুবাদী হতে চার্বাক দর্শনের অতি অল্পই আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে, হয়ত পূর্ণাঙ্গ দর্শনটিই আমাদের হাতে এসে পৌঁছত যদি সে সব ধ্বংস করা না হত চার্বক দর্শন সম্পর্কে আমরা এখন জানতে পারি সূত্র আকারে , সূত্রগুলোর মধ্যে বৃহস্পতি সূত্র মধবাচার্যের সূত্র প্রণিধানযোগ্য
বৃহস্পতি সূত্রঃ
.            পৃথিব্যাপতেজোবায়ুতিরি তত্ত্বানি
    ( পৃথিবী, জল,আগুন এবং বায়ু মৌল উপাদান)
.            তৎসমুদয়ে শরীরেন্দ্রিয় বিষয় সংজ্ঞা
( এই চারিটি মৌলিক উপাদানের সংমিশ্রণের ফলে শরীর, ইন্দ্রিয় এবং বস্তর উৎপত্তি হয়)

.           কিনোবাদিভ্যো মাদকশক্তিবৎ বিজ্ঞানম
( গুড়, তণ্ডুল,প্রভৃতিতে মাদকতা খাকেনা, কিন্তু ওই সমস্ত বস্ত দ্বারা সুরা প্রস্তত করলে মাদকতা জন্মে তেমনি বস্ত হতে চৈতন্যের উৎপত্তি
.            চৈতন্য বিশিষ্ট কায়া পুরুষঃ
( চৈতন্য বিশিষ্ট দেহই আত্মা)
.            কাম এবৈক পুরুষার্থঃ
(ভোগই জীবনের উদ্দেশ্য)
.           মরণ মেবপবর্গঃ
( মৃত্যুই একমাত্র মুক্তি)

১১*মাধবাচার্য বণিত সূত্রঃ
.            ভূমি ,অপ, অনল, অনিলÑ এই চারিটি ভূত বা মৌলিক পদার্থ হইতেই চৈতন্য সৃষ্টি হইয়াছে
.            হরিদ্রা পিত বর্ণ, চুন শুক্ল বর্ণ; কিন্তু উভয়ে মিলিত হইলে তাহাতে রক্তিম বর্ণের উৎপত্তি হয় গুড়, তণ্ডুলে মাদকতা নাই, কিন্তু ঔসব দ্রব্য দ্বারা সুরা প্রস্তুত করিলে তাহাতে মাদকতা শক্তি জন্মে এই চারিটি মৌলিক দ্রব্যের সংমিশ্রণে তেমনি ভাবে চৈতন্য উপস্থিত হয়
.           স্বর্গ , নরক, মোক্ষ, আত্মা, পরলোক কিছুই নাই বর্ণাশ্রম ধর্মেরক্রিয়া আদৌ ফলদায়ক নয় প্রতারক এবং ধূর্তেরা বেদের সৃষ্টি করিয়া স্বর্গ, নরক, প্রভৃতি নানা প্রকার অলৌকিক পদার্থের কথা বলিয়া মানুষকে অন্ধ করিয়া রাখিয়াছে, জন সমাজের প্রবৃত্তি জন্মাইয়াছে এবং রাজাদের নিকট হইতে বিপুল পরিমান অর্থ লাভ করিয়াছে
.            অগ্নিহোত্র, বেদপাঠ, ত্রিদণ্ড ধারণ, ভস্মলেপন প্রভৃতি কার্য বুদ্ধিহীন এবং পৌরুষহীন লোকেদের উপজীবিকা মাত্র
.            ধূর্তদের বিশ্বাস; জ্যোতিষ্টোম প্রভৃতি যজ্ঞে যে জীবের বলিদান করে সে স্বর্গ লাভ করে ধূর্তেরা তবে আপন পিতামাতার স্বর্গ লাভের জন্য তাহাদিগকে শিরচ্ছেদ করে না কেন?
.           শ্রাদ্ধকর্ম দ্বারা যদি মৃত ব্যক্তির তৃপ্তি হয়, তবে কোন ব্যক্তি বিদেশে গমন করিলে তাহাকে পাথেয় দিবার প্রয়োজন কি?বাড়িতে তাহার উদ্দেশ্যে কোন লোককে ভোজন করাইলেই তো হয়
.            দান করিলে স্বর্গস্থিত ব্যক্তির যদি তৃপ্তি হয়, তবে প্রাসাদের উপরের তলায় অবস্থিত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে নিচে বসিয়া কিছু নিবেদন করিলে সে পায় না কেন?
.           যত দিন বাঁচিয়া থাক ঋণ করিয়া ঘি খাও ভস্মীভ দেহ আবার কোথা হইতে ফিরিয়া আসে?
.            দেহাবসানের পর আত্মা স্বর্গলোক প্রাপ্ত হইলে তাহা ¯œহসমাকুল বন্ধুদের নিকট ফিরিয়া আসে না কেন?
১০.         ভণ্ড, ধূর্ত, নিশাচর এই ত্রিবিধ লোক একত্রিত হইয়া বেদ রচনা করিয়াছে অশ্¦মেধ যজ্ঞশেষে মাংস আহারের অনন্তর যজমান পতœ অশ্বশিশ্ন গ্রহণ করিবে ইত্যাদি অশ্লিল বিষয়ও ্ওই সকল নিশাচর ব্যক্তিদের সৃষ্টি
চার্বাক নামক কোন মনীষীর অস্তিত্ব ছিল কি না সেটা আজ আর আমরা জানি না, এই নামে কোন ঋষি ছিলেন বলে ধারণা করা হয় যিনি  আর্যÑ অনাযের্র সকল অযৌক্তিক বিশ্বাসকে অস্বীকার করে বস্তবাদী চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন চার্বাক যদি ব্যক্তি বিশেষ হন তবে তিনি আর্য কি অনার্য ছিলেন তা আমরা জানি না, তবে তিনি আর্য ধর্মেরই ব্যাপক সমালোচনা করেছেন, তিনি ব্যক্তি বিশেষ হলে অনার্য ছিলেন এমন ধারণা করাই সঙ্গত, আর্য- অনার্য বিবাদের সময় তারা পরস্পরের চিন্তাকে অস্বীকার করবেন এটাই স্বাবাবিক শাস্ত্রে বলা হয় দেবগুরু বৃহস্পতি দানবদের বিপথগামী করার জন্য এই ভোগবাদী দর্শন তাদের মধ্যে প্রচার করেছিলেন

পান, ভোজন তথা জাগতিক সুখ ভোগকে এনারা গুরুত্ব দিয়ে থাকেন তাইচর্ব ধাতু থেকে চার্বাক এসেছে বলে অনেকে ধারণা করে থাকেন অর্থৎ এরা পাপ পূণ্যাদি ভোগ করেনআবার মনে করা হয়চারু+ বাক হতে চার্বাক এসেছে এরকম ধারণা করার কারণ হল চার্বাকগণ মিষ্ট মিষ্ট কথা বলেন যেমন ধরা যাক: ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ, যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ
চার্বাক দর্শন বলে যে প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ যাকে প্রত্যক্ষ করা যায় না তার কোন অস্তিত্ব নেই প্রত্যক্ষ দুই প্রকার-বাহ্য প্রত্যক্ষ যা ইন্দ্রীয় দ্বারা প্রত্যক্ষ করা যায়; মানস প্রত্যক্ষ, যা মন দ্বারা প্রত্যক্ষ করা যায় যেমন: সুখ,দুঃখ বেদান্তের অনুমান শব্দকে চার্বাকগণ প্রমাণ হিসেবে মেনে নিতে চান না অনুমানকে চার্বাকগণ অভ্রান্ত সত্য বলে মেনে নেন না, এমনকি সেটা কার্য-কারণ সম্পর্ক দ্বারা সমর্থিত হলেও প্রৃকতপক্ষে তারা শতভাগ নিশ্চিত না হয় সিদ্ধান্তে যেতে চাইতেন নাঅর্থাৎ যা প্রত্যক্ষ প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত তাকে মেনে নাও কিন্তু অপ্রত্যক্ষ কার্য-কারণ সম্পর্ক দ্বারা সমর্থিত হলেও তাকে সন্দেহের উর্ধ্ব রেখ না কারণ এখন আমরা যাকে কার্য-কারণ সম্পর্ক জ্ঞান করছি সেটা অন্যথাও হতে পারে ব্যপ্তিজ্ঞান ছাড়া যথার্থ অনুমান সম্ভব নয়, আগুন ধোঁয়ার সম্পর্ক হল নিয়ত( ) এবং অব্যভিচারী ( রহাধৎরধনষব ), এই অবিচ্ছিন্ন সম্পর্কই হল ব্যপ্তি সম্পর্ক চার্বাকগণ বলেন যে, এই সম্পর্র্ক সন্দেহাতীত নয় কারণ আগুনের সাথে ধূমের সম্বন্ধ আছে কি না তা প্রত্যক্ষ করা যায় না দুটি বস্তু পাশাপাশি অবস্থান করলেই অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক বোঝায় না আবার কোন নিয়ত সম্পর্ক বর্তমানে প্রত্যক্ষগোচর হলেও অতীত, ভবিষ্যতে একই নিয়ম প্রযোয্য কিনা তা জানা যায় না যে অনুমান বর্তমানে সত্য অতীত ভবিষ্যতে সেটা একিই রকম নাও থাকতে পারে ব্যপ্তিজ্ঞান অনুমান নির্ভর হতে পারে না, কারণ অনুমান নির্ভর ব্যপ্তিজ্ঞান সন্দেহের ্উর্ধ্বে নয় আর অনুমান লব্ধ জ্ঞান আসে অন্যজ্ঞানের মাধ্যমে বা আপ্ত বাক্যের মাধ্যমে যা সুস্পষ্ট নয় বিধায় গ্রহণযোগ্য নয়                                             
 ইউরোপিয় দার্শনিক *হিউমও কার্য-কারণ সম্পর্ককে আকস্মিক যুগপৎ বলে উল্লেখ করেন তিনি বলেন  পাথর নিচের দিকে পড়ে এটা আমরা অভিজ্ঞতা থেকে জানি, কিন্তু  নিয়মটিকে তো আমরা দেখি না, সাদা কাক দেখিনি বলে বলতে পারি না যে সাদা কাক নেই্ এখানে চার্বাকগণের জন্যে বলতে হয় যে,সাড়ে তিন হাজার বছর পূর্বে তখনও কার্য-কারণ সম্পর্ক বিজ্ঞানের দ্বারা প্রমাণিত ছিল না কার্য-কারণ সম্পর্ক ছিল অনুমান নির্ভর , আরোহ এবং অবরোহ অনুমান দ্বারা কার্য-কারণের ধারণায় উপণীত হতে হত তবে অষ্টাদশ শতকের মানুষ হিসেবে হিউমের(১৭১১-১৭৭৬) ভিন্নভাবে  চিন্তা করার সুযোগ ছিল
বৌদ্ধ দর্শন এবং অদ্বৈত দর্শনও অনুমানকে চরম প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে না তবে অভিজ্ঞতা সাপেক্ষে ব্যবহারিক জ্ঞানের অবলম্বন হিসেবে স্বীকার করে এই দর্শনগুলো পারমার্থিক জ্ঞানকে স্বতোপ্রামাণ্য বলে গ্রহন করে, কিন্তু চার্বাকগণ আপ্তবাক্য তো পরের কথা  কার্যকারণ সর্ম্পকেও মানতে চান না অভিজ্ঞতাবাদী দৃষ্টিতে চার্বাকগণ সমালোচনার সম্ম্খীন হন কারণ সকল জ্ঞান প্রত্যক্ষভাবে আসে না অনুমান ছাড়া চিন্তা, আলোচনা, বিচার বিশ্লেষণ তত্ত্ব সম্বব নয় অনুমান সকল ক্ষেত্রে সত্য না হলেও কোন কোন ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনকে অস্বীকার করা যায় না
কোন জ্ঞানই প্রারম্ভিক পর্যায়ে  সীমাবদ্ধ থাকে না চার্বাক দর্শনও বিবর্তিত হয়েছে এবং শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়েছেঅর্বাচীন চার্বাকগণ এই দর্শনের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করেছিলেন তারা অতীতের প্রতি উদ্দিষ্ট অনুমানকে স্বীকার করেন, অতীতের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ মুলক ভিত্তি থাকে কিন্তু ভবিষ্যতের প্রতি উদ্দিষ্ট অনুমান অনিশ্চিত বলে গ্রহণযোগ্য নয়
কল্যাণ বা উদ্দেশ্যবাদ চার্বাক দর্শনে স্বীকার করা হয় না তারা বলেন,সৃষ্টি,পরিবর্তন, বিবর্তনের মূলে কারো কল্যাণ চিন্তা বা উদ্দেশ্য নেই সমস্ত ঘটনা যুগপৎ, অনিশ্চিত এবং আকস্মিক  সুখই জীবনের মূখ্য (সুখমেব পুরুষার্থঃ) সুখই স্বর্গ, দুঃখই নরক, মৃত্যুই মোক্ষ কাঁটার ভয়ে যেমন মাছ বর্জন করা বোকামি তেমনি দুঃখের ভয়ে বনবাসে গিয়ে কৃচ্ছ্রসাধন করাও বোকামি পদ্মবনে কাঁটা আছে , জীবনে দুঃখ আছে
 চার্বকগণ চেতনাকে স্বীকার করেন তবে এটাকে কোন আলাদা সত্ত্বা হিসেবে মানেন না তাদের মতে চেতনা দেহেরই একটি গুণ পান, চুন, এবং সুপারি এই তিনটি বস্তুর কোনটির মধ্যে লাল রং নেই, তবু এই তিনটি বস্তকে একসাথে চর্বন করলে লাল রঙের আবির্ভাব ঘটে
চার্বকগনণ পরমণুর অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিলেন না, কেননা পরমাণুকে দেখা যায় না, আকাশরূপ বস্ততেও তাদের অবিশ্বাস কারণ তা প্রত্যক্ষ করা যায় না তাই  স্বর্গ নরকে আদের বিশ্বাস নেই্ পরমাণুর ধারণা কণাদ দিয়েছেন ৫০০ খ্রি.পূ,সময়ে ডেমোক্রিটাস দেন ৪৬০-৩৭০ খ্রি.পূ  সময়ের মধ্যে লিউসিপাস পরমাণুর ধারণা দেন ( ) অব্দে
কার্য-কারণ সম্পর্কের মত পরমাণুর ধারণা চার্বাকগণের গ্রহণ না করার কারণ হল তখনও পরমাণু তত্ত্ব যথেষ্ট বিজ্ঞান সম্মত ভিত্তি লাভ করেনি
চার্বাকগণ আত্মার ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন না, তাদের মতে চৈতন্য বিশিষ্ট দেহই আত্মা অর্থাৎ দেহ আত্মা অভিন্ন মোক্ষে তাদের বিশ্বাস নেই, মৃত্য হচ্ছে এক মাত্র মোক্ষ পুনর্জন্মে তারা বিশ্বাসী হবেন না এটা বলাই বাহুল্য ভস্মীভূতদেহ পুনরায় কর্মফল ভোগের জন্য ফিরে আসে এটা গ্রহণযোগ্য নয় আজ আমরা জানি যে *জন্মান্তরের বিশ্বাসটি কোম ভিত্তিক সমাজের সৃষ্টি
   চার্বাক দর্শন কি নীতিহীন ভোগবাদী দর্শনমাত্র ? এটা ভেবে দেখার অবকাশ আছে যে পরবর্তী ষড়- দর্শনের ভাবের রাশ টেনে ধরেছিল চার্বাক, নইলে দেব-দেবতাদের গুণকীর্তণ আজও হয়ত শেষ হত না চার্বাবগণ বস্তুবাদী দৃষ্টিতে পথপ্রদর্শন করেন; তারা বাকির লোভে নগদ ছাড়তে নারাজ ( লালন ফকিরের গীতি স্মরণীয়) গ্রিক দার্শনিক এপিকিউরাসের নৈতিক মতবাদের সাথে চার্বকের নৈতিক মতবাদের মিল রয়েছে চার্বাকগণ শুধু ¯’’ ভোগের কথাই বলেন নি, দায়িত্বের কথাও বলেন, আসলে দায়িত্বহীন মানব সমাজের অস্তিত্ব সম্ভব নয় বস্তুবাদে সমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলোই সমৃদ্ধরাষ্ট্র বৃহস্পতির সামাজিক ন্যায় বিচার সম্পর্কে সূত্র রয়েছে:
রাজাকে জন সমর্থিত হতে হবে ( লোক সিদ্ধ ভবেৎ রাজা) চার্বাক দর্শনে, বর্ণভেদকে স্বীকার করা হয়নি, চার্বাক দর্শনই মূলত ভারতবর্ষের প্রথম মানবতাবাদী দর্শন এবং প্রথম বিদ্রোহ তারা ছিলেন স্পষ্টভাষী, উচ্চকণ্ঠ, সম্পূর্ণরূপে ভাবববদ বর্জিত, তাই তাদেরকে ঊনিশ শতকের ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠীর পরিণতি বরণ করতে হয়েছে আসলে মানুষ সর্বদা সব দর্শন গ্রহণ করতে প্রস্তত থাকে না, তবে তাদের ধীরে ধীরে প্রস্তুত করে নেবার প্রয়োজন রয়েছে

শব্দকে চার্বাকগণ প্রমাণ হিসেবে মেনে নেন নি,কারণ শাস্ত্রসমূহে যা লেখা  আছে তার অনেক কিছুই অযৌক্তিক ,দুর্বোধ্য, পরস্পর বিরোধী ,বহু অর্থজ্ঞাপক একবিংশ শতাব্দীতেও মানুষ সকল ধর্মবচন অন্ধের মত মেনে নেয় অথচ প্রাচীন কালে চার্বাকগণ কতটাই না যুক্তিবাদী হয়ে উঠেছিলেন; এমনকি তারা কার্য-কারণ সম্পর্ককেও সন্দেহের উর্ধ্বে রাখেন নি পৃথিবী জীব জগৎ সস্পর্কে ধর্মশাস্ত্রগুলোতে গল্পের অভাব নেই, কিন্ত চার্বাকগণ কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার বছর পূর্বে বলেন যে-মাটি, পানি, আগুন, বাযুর সমন্বয়ে জগতের সৃষ্টি জীব জগতের মধ্যে মানুষও অন্তর্ভক্ত! গ্রীক দার্শনিক এমপিডকালিসও চার্বাকগণের মত - মাটি, জল , আগুন বাযুকে মৌলিক উপাদান হিসেবে উল্লেখ করেন থ্যালিস পানিকে মূল সৃষ্টির উপাদান মনে করেন; এনাক্সিমেনিস বলেন, বায়ু সৃষ্টির মূল উপাদান তিনি আরও বলেন, কিছু উপাদান সর্বদাই বর্তমান ছিল কারণ শূণ্য থেকে কিছুই সৃষ্টি হতে পারে না
আমরা জানি বিবর্তন বিদ্যা আধুনিক ইউরোপের সৃষ্টি চার্বাকগণের বিবর্তন সম্পর্কিত ধারণা ইউরোপীয় ধারণার অগ্রবর্তী  চার্বাক দর্শনের সূত্রগুলোকে সরল বলার সযোগ আছে কিন্তু সব চিন্তাই বিকশিত হয় , চার্বাক চিন্তা বিকশিত হতে পারেনি যদি হত তবে  কার্ল মার্কস- এঙ্গেলস, ডারউইনের-এর মত বস্তুবাদী মনীষী ভারতবর্ষেও জন্ম নিতেন
 তাছাড়া চার্বাকদের মূল কোন গ্রন্থ সংরক্ষণ করা হয়নি সাংখ্য,জৈন, বৌদ্ধ দর্শনও বিবর্তন সমর্থন করে তবে তা সম্পূর্ণ ভাব মুক্ত নয়
 বস্তুবাদ যে ভাববাদের পাশাপাশিই সর্বদা বিরাজমান ছিল তার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে-কিন্তু তাকে কখনই প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্থানে যেতে দেওয়া হয়নি কয়েকটি উদাহরণ দেখা যাক: ** ভীমকে অজগর- সর্প পেঁচিয়ে ধরেছে-যুধিষ্ঠির তাকে উদ্ধার করতে এলেন, এখানে যুধিষ্ঠির আর সর্পের সংলাপ যথেষ্ট গুরুত্বের দাবী রাখে
সর্প-ব্রাহ্মণ কে?
যু -সত্য, দান, ক্ষমা, সচ্চরিত্র, অহিংসা,তপস্যা, দয়া যার আছে তিনিই ব্রাহ্মণ
সর্প-শূদ্রের মধ্যেও এই সবগুণ থাকতে পারে
যু- যে শূদ্রের মধ্যে ওইসব গুণ রয়েছে তিনি শূদ্র নন তিনি ব্রাহ্মণ
সর্প-জ্ঞাতব্য কি?

যু-সুখ,দুঃখহীন পরমব্রহ্মই( সবিশেষ নয়, নির্বিশেষ ঈশ্বর) জ্ঞাতব্য; যাকে লাভ করলে আর শোক থাকে না
সর্প- এমন কাউকে তো দেখা যায় না যিনি সুখ, দুঃখের উর্ধ্বে
যু- আপনি যাই মনে করুন, সুখ,দুঃখাতীত ব্রহ্ম রয়েছেন
সংলাপটিতে ভাববাদী আর্য আর বস্তবাদী অনার্য চিন্তার সংঘাত সহজে অনুমেয় সর্প মূলত অনার্য কোন জ্ঞানী ব্যক্তি
**১০রামায়ণের  আর একটি উদাহরণ প্রণিধানযোগ্য; রাম বনবাসে যাবার প্রাক- কালে জাবালি নামক এক জ্ঞানী ঋষি এলেন তাঁকে কিছু বাস্তব বুদ্ধি দেবার জন্যে তিনি বললেন-“দশরথ যেখানে যাবার সেখানে গেছেন, তুমি বৃথা বিনষ্ট হচ্ছ, প্রয়োজনীয় বিষয়ে যারা ধর্মপরায়ন হতে যায় তাদের জন্য আমার দুঃখ হয়, তারা ইহ লোকে কষ্ট পায়, মরণান্তেও বিনাশ পায় পিতৃশ্রাদ্ধে কেবল অন্যের নাশ হয়,মৃতব্যক্তি কখন আহার করতে পারে? চতুর লোকের শাস্ত্রে আছে-যজ্ঞ কর, দান কর,তপস্যা কর ইত্যাদি, এর উদ্দেশ্য কেবল জনসাধারণকে বশীভূত করা অতএব রাম তোমার এই বুদ্ধি হোক যে, পর লোক নেই যা প্রত্যক্ষ তার জন্যই উদযোগী হও যা পরোক্ষ তা পরিত্যাগ কর তুমি সর্ব সম্মত সদ্যুক্তি অনুসারে ভরতের উপর অর্পিত রাজ্য গ্রহণ কর রাম বা অন্য ঋষিগণ জাবালির সাথে একমত হননি বরং তাদের চাপে জাবালি বলতে বাধ্য হন, ‘আমি অবস্থানুসারে কখনো আস্তিক কখনো নাস্তিÍ হই
১২*মহাভারতের হিড়িম্বক, বক,কির্মির, চার্বাক,সর্প ঘটৎকচ এবং রামায়ণের বানর সকল, জটায়ু প্রমূখ ছিলেন মূলত অনার্য জনগোষ্ঠী  আর্য ঋষিগণের শৈল্পিক জ্ঞানের প্রশংসা না করে পারা যায় না! জাবালি অনার্য ব্যক্তি না হলেও লোকায়ত দর্শন দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন
তবে আর্য অনার্য দর্শন চিরকাল সংঘাতময় অবস্থ্ায় থাকেনি, কালের প্রবাহে সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়েছে ভগবদগীতাতে সেই সমন্বয় দেখতে পাই গীতাকে মহাভারতের সমকালীন মনে করা হয় না এটিকে মহাভারতে প্রক্ষিপ্ত বলে মনে করা হয় গীতাতে এমন কিছু মন্ত্র রয়েছে যা পরবর্তী কালের রচনা *গীতার রচনা কাল ৬০০ খ্রি. পূ. বা তার সামান্য পূর্বাপরের  বলে -িতগণ মত দেন
গীতার দর্শন অনুসারে ঈশ্বর কোন কাজ করেন না প্রকৃিতই কাজ করে ঈশ্বর হলেন জগতের পিতা আর প্রকৃতি তাদের মাতা অপর একটি মন্ত্রে রয়েছে;
#ভুমি, জল, বায়ু, আকাশ,মন, বুদ্ধি, অহংকার এই আট প্রকার আমার জড় প্রকৃতি
# এই আট প্রকার প্রকৃতির নাম অপরা( জড়,নিকৃষ্ট) প্রকৃতি ইহা ছাড়া আমার আর একটি প্রকৃতি রহিয়াছে, তাহার নাম পরা ( শ্রেষ্ঠ) প্রকৃতি হে মহাবাহো! জানিবে তাহাই এই সমস্ত জদৎকে ধারণ করিয়া রহিয়াছে এই পরা অপরা প্রকৃতি হইতেই সর্ব প্রাণীর সৃষ্টি হইয়াছে
এখানে ভাব বস্তুবাদী দর্শনের মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টি সুস্পষ্টএই দর্শনে জড় চেতনাকে সমান্তরালভাবে দেখানো হয়েছে
চার্বাকের সময় নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে, আবার আদি শা¯ত্র হিসেবে ঋগবেদের বয়স কত তাও সঠিকভাবে জানা যায় না চূড়ান্ত সিদধান্ত নেবার সময় এখনও  আসেনি

রাধাকৃষ্ণনের যুগবিভাগ:

চার্বাক, জৈন, বৌদ্ধমতবাদের উৎপত্তিকাল : ৬০০ খ্রি.পূ
.ভগবদগীতা উপনিষদ : ৫০০ খ্রি.পূ
. ষড় দর্শনের প্রসার : ৩০০খ্রি.পূ--২০০খ্রি.পূ
চার্বাক দর্শনকে ঋগবেদের সমকালীন মনে করা হয়, আর ঋগবেদ রচনার সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা যায় নিমনে করা হয়, বেদ রচিত হয়েছে প্রায় ১০০০ বছর ধরে , ১৬* .মু.শহীদুল্লর মতে ভারতীয় হিন্দ- আর্য ভাষার আবির্ভাব ২৫০০খ্রি.পূ আর বৈদিক ভাষা এসেছে (১২০০ খ্রি.পূ) সুনীতিকুমার  চট্টোপাধ্যায় বেদ সংগ্রহের কাল ধরেছেন ১০০০খ্রি. পূ কিন্তু আর্যদের আগমন কাল খ্রি.পূর্ব ১৫০০ অব্দম্যাক্সমুলার বেদের সময় ধরেছেন খ্রি.পূ ১২০০-৬০০খ্রিপূঋগবেদের সবগুলো মন্ত্র কি ওই সময়েই রচিত হয় ? অনেকে তাই মনে করেন, কিন্তু প্রকৃত সত্য ভিন্ন এমনটা নয় যে আর্যগণ ভারতবর্ষে প্রবেশ করে , মন্দির-আশ্রম বানিয়ে অতঃপর আরাম করে মন্ত্র রচনায় মনোযোগ দিয়েছেন এটা মনে করার কারণ আছে যে তারা ভারতবর্ষে প্রবেশের পূর্ব হতেই কিছু কিছু মন্ত্র রচনা করেছিলেন, এবং এগুলো শ্রুতি হিসেবে চলে আসছিল প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রথম পর্যায়ে এর সুর- ছন্দগুলো ছিল এমন যে সে গুলোর লিখিত রূপ দেওয়া ছিল অসম্ভব, পরবর্তীতে সেগুলো লৈখিক রূপ পাবার যোগ্য হয় ১৪*ভারতের কেরালা প্রদেশে অদ্যাবধি প্রাচীন সেই সুরের ফসিল বিদ্যমান রয়েছে, যে গুলোকে স্বরলিপিতে নিয়ে আসা আজও কষ্টকর অদ্যাবধি সেগুলো বংশ পরম্পরায় প্রবাহিত হচ্ছে  
আর্য সংস্কৃতির প্রচীনত্ব ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা বংশের ভাষা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ধারণা করা যায এছাড়া প্রাচ্য পাশ্চাত্যের মিথ দেবদেবী দের মধ্যে সাদৃশ্য তাদের সগোত্রীয় বলে ভাবতে বাধ্য করে  ১৫*যেমন ধরা যাক: ককেশীয়দের পবন দেবতার নাম-মারুত্তস(সংস্কৃত-মরুৎ), সূর্যদেবতার নাম-সূর্য্যস(সংস্কৃত-সূর্য) তুরস্কের একটি সন্ধি পত্রে, -মিত্র, অরুন,বরুন, ইন্দ্র, নাতস্যদ্বয়গণের ( অশ্বিনিকুমারদ্বয়) উল্লেখ আছে
চার্বাক দর্শনও কি অতটাই প্রাচীন? এটা মনে করার কারণ নেই যে আর্যগণ বংশ পরম্পরায় একটা নাস্তিক্য মতবাদকে এতদূরে  নিয়ে এসেছেন *অন্তত চার্বাক দর্শনের প্রথম উল্লেখকারী দেবগুরু বৃহস্পতি অতটা প্রাচীন নন এটা আমরা জানি যে অনার্য সংস্কৃতি যথেষ্ট উন্নত ছিল, সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে আর্যগণের আগমনের প্রায় পনেরশত বছর পূর্বে  (২৭০০ খ্রি.পূ)  চার্বাক দর্শন হল সেই সভ্যতা নির্মানকারী অনার্য মনীষীদেরই দান লোকায়ত দর্শনগুলো কালের সীমা অতিক্রম করে চার্বাকের মধ্যে স্ফটিকাকার লাভ করেছে পরবর্তীতে ভাববাদের ভাব আমাদের এমন ভাবে ভাসিয়ে নিয়ে গেল যে , আঁকড়ে ধরার মত কোন বস্তুই আমাদের হাতে রইল না আশান্বিত হয়ে উঠি এটা দেখে যে, এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলশ্রুতিতে বৃক্ষ তলদেশে কিছুটা আলো প্রবেশ করছে  




তথ্যসূত্র :
.            ভারতীয় দর্শন : এস. রাধাকৃষ্ণন
.            ভাতীয় দর্শন :  রমেন্দ্রনাথ
.           ভারতীয় দর্শন : প্রমোদ বন্ধু সেনগুপ্ত
.            বাঙ্গালীর ইতিহাস : নীহাররঞ্জন রায়, দ্বাদশ অধ্যায়
.            সিদ্ধার্থ : হেরমান হেস
.           ঋগবেদ : ১০ -,৭২সুক্ত, ঋগ
.            ভগবদ গীতা ; / ,, ;  ১৬/,
.           সোফির জগৎ : জোসটিন গার্ডার
.            মহাভারত : বনপর্ব, শান্তি পর্ব
১০.         রামায়ণ : অযোধ্যাকাণড
১১.         সর্বদর্শন সংগ্রহ : মাধবাচার্য
১২.          ইতিহাসের আলোকে রামায়ণ : সুধাময়দাস, পৃ-৪৮, ৪৯, ৭৮
১৩.        ইতিহাসের আলোকে মহাভারত : সুধাময়দাস : পৃ-৮০
১৪.         হিস্ট্রি আব -িয়া; বি বি সি ডকুমেন্টরী
১৫.         বাঙ্গালির ইতিহাস : রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
১৬.        বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত : . মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, উপক্রমণিকা, পরিশিষ্ট
১৭.          চার্বাকের উল্লেখ আছে -মৈত্রায়নী উপনিষদ, বিষ্ণপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, বৃহদারণ্যক উপনিষদ,ছান্দগ্য উপনিষদ, কথা উপনিষদ, পতঞ্জলির ভাষ্য, বিদ্যাবদান বৌদ্ধ শাস্ত্র ইত্যাদি