সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০১৪

দ্বিতীয় গৃহ





চার্বাক সুমন

তুমি কি স্মরণ করতে পার অতীতের দিনগুলোর কথা যখন আমরা ছিলাম সুখীতম একটি যুগল অথচ কি হল আজ কেন আমরা হারিয়ে ফেলছি আত্ম সুখ আর হৃদয়ে জেগে উঠছে ঊষর চর? বলল শৈল দেব
কিন্তু সে কোন প্রতিউত্তর পেল না গভীর ভালোবাসার দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে দেখতে লাগল  বিপার কালো চোখ, বাঁকা অধরসুচিকন ভ্রু জোড়া যে দুটি তার হলদেটে মুখে চমৎকার মানানসই
বল! বিপা, প্রিয় নারী আমার, কেন আমরা পরস্পরকে দূরে অপসারণ করছি, কি সেই শক্তি যা আমাদের মধ্যবর্তী স্থানে প্রসারিত হচ্ছে আর আমাদের দূরে অপসারণ করছে এটা অসম্ভব যে তোমাকে ছাড়াই আমাকে দীর্ঘ একটা জীবন অতিবাহিত করতে হবে; সেটা কোন জীবনই নয় যাতে তুমি নেই

বল! শৈল পুনরায় বলল, উত্তরের প্রতীক্ষা করতে থাকল সে কিন্তু অপরজন রইল নিশ্চুপ, অধঃমুখ, বিভ্রান্ত বিপার ঠোঁটের মৃদু কম্পন তাকে আরো আবেগ তাড়িত করল বিপার মুখের প্রতিটি রেখা সে উপলব্ধিতে নিয়ে এল, কোমল অধর, কৃষ্ণবর্ণ চোখ, আর হলদেটে মুখমণ্ডলে সরু দুটি ভ্রুর অবস্থান, অনায়াসে মোহাবিষ্ট করে ফেলে; এরূপ দৃশ্যে শৈলের শান্ত ভাবাবেগ হয়ে উঠল তরঙ্গায়িত সে বিপার কর স্পর্শ করে বলল, সেটা কোন জীবনই নয় যাতে তুমি নেইযা আমার কল্পনাতীত তাই তুমি বাস্তবে রূপ দিচ্ছ এই চোখ, এই ঠোঁট আর এই ¯স্নিগ্ধ কোমলতা আমার  নয়, এটা  কল্পনাতীত, দুঃস্বপ্ন তুল্য

--আমি তো এমন কিছুই বলিনি যাতে তুমি অতটা বিভ্রান্ত হয়ে যেতে পার
--জানি তুমি সেটা পার না, কিন্তু এটা কি সত্য নয় যে আমাদের মধ্যবর্তীস্থানে এমন একটা কিছু ক্রিয়াশীল রয়েছে যা আমাদের পরস্পরকে দূরে অপসারণ করছে? ভালোবাসার বোধগুলো এতটাই সূক্ষ্ম যে তারা সামান্যতম বিচ্যুতিও বুঝে নেয়
--কোন কিছুই চিরকালের জন্য নয়, বলছে বিপা, আমরা কষ্ট পাই কারণ সব কিছুই আমরা নিজের জন্যে চাই এটা শিশুদের মতই স্বার্থপরতা যারা সব খেলনা নিজের জন্যে চায় অথচ সারা জীবন সেগুলো সংরক্ষণ করতে পারে না আর ভালবাসা নামক জিনিসটি  ঝড়ের মতই ক্ষণস্থায়ী আর অস্পষ্টতায় ভরা
--তুমি কি বলছ তা আমার বোধগম্য নয়!
--কোন বিশেষ ব্যক্তির জন্যে আমরা তৈরি হই না সে ভীত হয়ে উঠল এর প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে সেটা ভেবে; সে শৈলের মুখের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখল
--বিপানিজেকে বিভ্রান্ত কর না, আমরা প্রায়ই বেঠিক পথে চলি আর কোন লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি না সত্য যে, আমরা নির্দিষ্ট কারো জন্যে তৈরি হই না , কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি পরমাণু যখন জোট বাঁধে তখন তারা হয়ে ওঠে অবিচ্ছেদ্য আর পরস্পরের জন্য তাৎপর্যবহ তুমি নিশ্চয় ভাবছ না যে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি; জানি না, এসবের কি অর্থ
বিপা, শৈল তার কর স্পর্শ করে বলতে লাগল, সূর্য আর পৃথিবীর মতই আমরা একটা নিঁখুত বন্ধনে যুক্ত, সেটা এতটাই নিঁখুত যে এর সামান্যতম বিচ্যুতি কেবল ধ্বংসই নিয়ে আসবে 
--কোন কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না আমার
--সেটা তত গুরুত্বপূর্ণ নয়, কাঠবিড়ালী আমার, বলল শৈল, তার গণ্ডদেশ যে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে সেটা অনুধাবণ করতে তার কোন অসুবিধাই হল না বিপার হাত সে পুনরায় স্পর্শ করল, কিন্তু কাঠবিড়ালী শব্দটি সে দ্বিতীয়বার উচ্চারণ করতে পারল না এরূপভাবে সে পূর্বে কখনও তাকে সম্বোধন করে নি , এটা যেন একটা শিশুকে প্রবোধ দেওয়ার চেষ্টা, সে এমন একটা শিশুকে কাঠবিড়ালী বলে প্রবোধ দিচ্ছে যে তার চেয়ে দু বছরের বয়োজ্যেষ্ঠ
ওয়েটার এল ওদের সেবা দেবার জন্যে কফি চাই আমাদের ,বলল শৈল; আর হাতটি সে সরিয়ে নিল তৎক্ষণাৎ
--কফি চলবে কি ? সে সোজা চাইল বিপার চোখে, কিন্তু অধঃমুখে থাকার জন্যে সে তার অশ্রুসিক্ত চোখ দেখতে পেল না বিপা সম্মতি জানাল মাথা নেড়ে, এখন কফির প্রয়োজন যতটা তার চেয়ে অধিক প্রয়োজন সম্মুখের দণ্ডয়মান লোকটাকে বিদায় দেওয়া লজ্জাকর এই অবস্থাটার অবসান কখন হবে কে জানে
--কাঠবিড়ালী আমার , শৈল জোরপূর্বক শব্দটি ব্যবহার করল এবং নির্দিধায় চাইল মেয়েটার চোখে, কিন্তু সেই দৃষ্টির সে কোন অর্থই খুঁজে পেল না আমরা হব সবচাইতে সুখি, সে বলতে থাকল, এটা আমার প্রতিজ্ঞা তোমার প্রতি আর সকলের প্রতিও সে আবার বিপার আঙ্গুলগুলোর উদ্দেশ্যে হাত প্রসারিত করল
--শৈল , তুমি আজ এতটা ভাবাকুলতায় নিমজ্জিত হয়েছ কেন?
-- তুমিও কি হও নি? তোমার দৃষ্টিও কি অস্পষ্ট হয়ে ওঠেনি? বলল শৈল, এবং এটা কম আশ্চর্যের নয় -যে নারী আমার কাঙ্খিত সে আমার চেয়ে দু বছরের বড়!

তাদের আলোচনা সমাপ্ত হল, আর এতে করে তাদের মধ্যবর্তী ব্যবধানটা কমল না মোটেই ; তারা স্বপক্ষের আর বিপরীত পক্ষের যুক্তিগুলো বারবার করে যাচাই করে নিতে থাকল, রাতে বিপা জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইল নিঃস্পৃহ দৃষ্টিতে, সে জানে না সে কি ভাবছে, ভাবনাগুলো এলোমেলো, উদ্দেশ্য রহিত , সেটা আরও যন্ত্রণাদায়ক এই কারণে যে, সে জানে না তার কী চাওয়া উচিৎ
আমি কি করছি, সেটা আমার জানা নেই; কি চাওয়া উচিত  সেটা আমরা জানি না সহজ একটা জীবনকে আমরা নিজেরাই করে তুলি জটিল, বিভ্রান্তিকর সুসজ্জিত কিছু সুতোকে পাকিয়ে ফেলার মতই আমরা সব কিছু পাকিয়ে ফেলি ওর স্বর আমাকে আর রোমাঞ্চিত করে না , ওর বাক্যে  আমি আর অশ্রুসিক্ত হই না কেন এমনটা হল কেন এই পরিণতি? সব ঠিক পথেই রয়েছে তবে কেন সেই হৃদয়াবেগ আর জাগ্রত হয় না?

ঘরের সবগুলো বস্তু সে একে একে মুছে পরিষ্কার করে ফেলল, কিন্তু ভাবনাগলোর তখনও সমাপ্তি নেই এটা যেন একটা ঘূর্ণায়মান চক্র যার কোন শেষ নেই
অন্তত ওর সাথে লুকোচুরি খেলতে পারি না আমি, ওর ওপর আমার দাবী এখনও শেষ হয়ে যায় নি; সে স্বগতোক্তি করল আসবাবগুলো সে পরিষ্কার করল দ্বিতীয়বার, পর্দাগুলো টেনে টেনে বসিয়ে দিতে লাগল সঠিক স্থানে, যদিও ওগুলো ঠিক স্থানেই রয়েছে
আমি ওকে কষ্ট দিতে পারি না , বলল সে, আমার এই পশ্চাৎপসরণের কোন কারণ নেই , যে ভাবাবেগ হারিয়ে গেছে তার জন্য সে দায়ী নয়
     
আবেগের গভীরতা বাড়িয়ে নেবার জন্য সে অতীতের স্মৃতি চারণে মনোযোগী হল
তখন তারা এতটা নিকটবর্তী অবস্থানে ছিল না, শৈল জানত না নিজের চেয়ে বয়সে বড় একটি মেয়েকে কিভাবে প্রেম নিবেদন করতে হবে তাই সে দু বছর ধরে কেবল বই উপহার দিয়ে এসেছে, আর প্রায়ই সে সব নিয়ে আলোচনা করতো যা তার কাঙ্খিত নারীটির জানা ছিল না, সে যথাসাধ্য চেষ্টা করত তার জ্ঞান প্রদর্শনের, নারীটির অবশ্য কখনই জ্ঞানের বিষয়ে  আগ্রহ দেখা যেত না

--তুমি যতটা নও ততটা নিজেকে উপস্থাপন কর কেন? একদা বলল বিপা
--আমি তো কখনই নিজেকে জাহির করতে চাই না
--তবে কি চাও ?
--সেটা কি এখনও অজানা?
সে দিন বাক্যালাপ আর বেশি এগোলো না, তবে বই  আসতে থাকল নিয়মিত বিরতিতে; বইয়ের স্থলে ফুলের আবির্ভাব হত কোন কোন দিন
--আমি চাই তুমি এটা পড়, বলল শৈল
--আজ পড়ার আগ্রহ নেই অন্যদিন দিও
নিজের কণ্ঠস্বর শুনে সে লজ্জিত হয়ে উঠল, ভীত হল এটা ভেবে যে অপর জনের নিকটেও হয়ত সেটা গোপন নেইঅন্য দিন দিও’- এতে যে দাবী আর স্নেহ প্রকাশ পেয়েছে তা আর কারই অজানা নেই, এতে তারা আরও বেশি লজ্জিত হল সে নিজের প্রতি বিরক্ত হল এটা ভেবে যে, সামান্য একটি বাক্য সে নিঃস্পৃহভাবে উপস্থাপন করতে পারল না শৈল বুঝল, সে যা জানতে চায় তা আর অব্যক্ত নেই

তার উপহারের বইগুলো ফেরত এল এই অজুহাতে যে সেগুলো পঠিত হয়েছে শৈলের জন্যে এটা ছিল অপমান আর বেদনার, কিন্তু আঘাত পাবার পর তার অর্ধস্ফুট  ভাবাবেগ আবির্ভত হল পূর্ণরূপে
শৈল সর্বদা পূর্ব থেকে সেই সব স্থানে হাজির থাকত যেখানে বিপার উপস্থিতির সম্ভাবনা রয়েছে, এতে দশটিতে সাতবার দেখা হত ওদের, কথা হত পাঁচবার কিন্তু অবস্থাটি ক্রমে অস্বস্তিকর হয়ে উঠছিল উভয়ের জন্য, এর সমাপ্তিটা ছিল অতীব প্রয়োজনীয়
--শৈল কী চাও তুমি? কেন অনুসরণ করছ , আমরা উভয়ই হয়ে উঠছি হাস্যকর বিপা  শৈলকে একাকী কক্ষে ডেকে নিয়ে বলল  
শৈলের হৃদস্পন্দন এতটাই বেড়ে গেল যে সে নিশ্চুপ থাকতে বাধ্য হল,হতাশার অশ্রু তার দৃষ্টি  ঝাপসা করে দিতে লাগল
--কী  চাও তুমি? পুনরায় বলল বিপা
--তুমি সেটা জান! শৈল বলল প্র্রতি উত্তরে বিপা অনুধাবন করতে পারেনি উত্তরটা এত স্পষ্ট ভাবে আসবে, তার ধারণা ছিল শৈল লজ্জা বশত নিশ্চুপ থাকবে আর তার বর্ষিত উপদেশাবলীর মালা গলায় ধারণ করে বাড়ি ফিরবে তারা উভয়ই দাঁড়িয়ে রইলে এটা না জেনে যে, ঠিক কিভাবে সমাপ্তিটা ঘটানো উচিত বিপা একটা যুতসই সমাপ্তিসূচক বাক্যের সন্ধান করতে থাকল, আর শৈল ভাবতে থাকল আজকের পর জীবনটিকে সে কিভাবে বয়ে নিয়ে চলবে একজন নারীর প্রেমিক হবার সবচাইতে বড় অযোগ্যতা হল বয়সে ছোট হওয়া সোনালি, বিপার বান্ধবী, এসে এই অস্বস্তিকর অবস্থাটার অবসান ঘটালো, সে তাদের উদ্দেশ্যে বলল, আলাদা করে কথা বলার সময় এটা নয়, ওদের লজ্জিত মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, হতেও পারে! সোনালিকে অনুসরণ করে বিপা মুক্তি পেতে চাইল; কিন্তু তাকে থেমে যেতে হল কারণ তার বাম হাতটি পেছন থেকে ধরে রাখা হয়েছে বিপা চাইল ওর দিকে; শৈল চুমো খেল ওর হাতে!

বিপা যখন অন্যদের সামনে আবির্ভত হল তখন সোনালি বলল, অনেক বেশি লাল দেখাচেছ তোমাকে, কি এমনটা ঘটল এতটা কম সময়ের মধ্যে?
--ওকে শক্ত করে বলতে হবে, ভাবল বিপা শৈল ভাবতে থাকল কি করে নির্বোধ মেয়েটাকে বুঝিয়ে দেওয়া যায় যে, প্রেমিক হিসেবে সে অনন্য প্রতিটি পক্ষই অপর জনকে বুঝিয়ে দিতে চায় , বুঝতে চায় না কেউই
আবার তাদের সাক্ষাত ঘটল টাঙ্গনের তীরে, বিপা চাইছিল যতটা দ্রুত সম্ভব এর সমাপ্তি ঘটাতে
শৈল , বিপা বলতে থাকল, নিজেকে সংযত কর আমরা শহরের আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠছি
--সেটা আমার বিবেচ্য বিষয় নয়
--আমি তোমার বড় !
-- এটা সমস্যা হিসেবে খুব বেশি উলেলখযোগ্য নয়

সমস্যা নয় ! বিপা বলল রাগত স্বরে, তুমি আমার প্রেমিক হতে চাও? শুধরে যাও, তোমাকে এতটা বাজে ভাবিনি
বিপা, বলল শৈল , এই প্রথম সে বিপাকে নাম ধরে সম্বোধন করল; এটা কি একেবারেই অসম্ভব? সে সম্মুখের ঘাসগুলো ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলল
--যা অসম্ভব তা কি করে হবে?
--কেন নয়? আমার অযোগ্যতার ক্ষেত্রগুলো জানিয়ে দাও যেন সে সব পূরণ করে নিতে পারি সেজন্য পর্যাপ্ত সময় আছে আমার
--শুধু এটা মনে রাখ -এটা কখনই সম্ভব নয়, কোন দিনই সম্ভব নয়
সোনালি প্রতীক্ষা করছিল নিকটবর্তী স্থানে; কোন কিছুই ঠিক পথে চলছে না, নরগুলো অযথাই জন্ম নেয় নারীদের কষ্ট দেবার জন্যে;বিপা বলল সোনালিকে, সমস্ত দিন তারা একত্রে অতিবাহিত করল, আরো কিছু যুক্তি সে নির্দিষ্ট করে নিল
--আর একবার দেখা যাক; বলল সোনালি
--কোথায় পাব ওকে?
--যেখানে রেখে এসেছ, সেখানেই পাব ওকে
--কিন্তু আমরা ওকে রেখে এসেছি চার ঘন্টাপূর্বে
--আরো চার ঘন্টা সে বসে থাকবে সেখানে, আমার কথার সত্যতা এখুনি বুঝতে পারবে
তারা যখন  আবার ফিরে এল, তখন শেষ বিকেল, শৈল ঘাস ছিঁড়ছে দু হাতে আর নদীর ওপাড়ে কিছু একটা অন্বেষণ করছে
--শৈল বিপা ওর ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল, বাড়ি যাবে না?
--না
--এভাবেই থাকবে?
--হ্যাঁ
--বাড়ি যাও আমরা নিজেরাই সংকট তৈরি করি, অনেক ভাল নারী পাবে তুমি
--আমি সেটা চাই না বলল শৈল
--তুমি তো এটাও জান না যে আমি কাউকে চাই কি না
শৈল তাকিয়ে রইল শূণ্য দুষ্টিতে , সে ছাড়া বিপার অন্য কোন প্রেমিক থাকতে পারে সেটা তার স্বপ্নের অতীত শৈলের শূণ্য দৃষ্টি লক্ষ্য করে বিপা বলল, তোমার যেমন পছন্দ রয়েছে -আমারো কি থাকতে পারে না?
শৈল চাইল সোজা ওর চোখে, তার প্রতি বিপার স্নেহশীল দৃষ্টি তার সব ধৈর্যের বাঁধ ধ্বসিয়ে দিল, নির্বোধের মত মুখে হাত দিয়ে কাঁদতে লাগল সে বিপা অস্বস্থিকর অবস্থাটা কাটানোর জন্যে ফিরে এল সোনালির নিকট
-- কাঁদছে
সোনালি বলল , অনেকটাই এগিয়েছে দেখছি সব কিছুই তোমার উপর নির্ভর করছে
--সে আমার ছোট
--সেটা ওই আবেগের নিকট যথেষ্ট নয়
এর পরেও বিপা শৈলের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে উপণিত হতে পারে নি,তার উপস্থিতির স্থানগুলোতে শৈলকে আর দেখা যেত না, বিষয়টি বেদনাদায়ক হলেও বিপা ভাবল, যাক তবে সব চুকে গেছে পরবর্তী দিনগুলোতে সে সর্বদাই শৈলের কথা ভাবতে লাগল, আর মনে মনে বলত , ছেলেটা এত সহজে হাল ছেড়ে দিল!

বিপা ফুলের দোকানে প্রতীক্ষা করছিল, শৈল তাকে অতিক্রম করে গেল নিরাসক্ত ভাবে, সে বিপাকে লক্ষ্য করে নি অথবা তাকে এড়িয়ে গিয়েছে স্বেচ্ছায় শৈলের বেদনাদীর্ণ মুখটা তার দৃষ্টি এড়াল না তার অন্তরটা বিষিয়ে গেল আর সেখানে স্থান লাভ করল শৈলের জন্যে স্নেহ , ভালোবাসা ,প্রেম
বিপার অনুরূপ শৈলের ভাবনাগুলো অতটা জটিল নয়, সে জানে সে কি চায়, কামনা যত বেশি, যন্ত্রণা তত গভীর সন্ধ্যা তারা জ্বলছে উজ্জ্বল হয়ে, সূর্যালোকের আলো সেটা প্রতিফলিত করছে গৌরবের সাথে তাই সেটা এত সুন্দর এত উজ্জ্বল আমরা কৃষ্ণ গহ্বরের মত সব কিছুই আত্মসাৎ করে ফেলি তাই আমরা কৃষ্ণ বর্ণ, অনুজ্জ্বল

আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে সে বলল, ওখানেই রয়েছে আমার দ্বিতীয় গৃহ, এটাই হবে আমার প্রতিশোধ; সে তার কৃতকর্মের জন্যে অনুশোচনা করবে এটাই বা কতটা বাস্তব সম্মত যে ,আমাকে জীবন কাটাতে হবে ওকে ছাড়াই, সেটা পৃথিবী থেকে আট কোটি কিমি দূরে সৌর জগতের অন্য কোন গ্রহে, ওকে দেখার কোন প্রত্যাশা না রেখে; জীবন মৃত্যুর মত একটা ব্যবধান সর্বদা আমাদের পৃথক করে রাখবে পৃথিবীতে কোন দিন ফিরতে পারব না এই শর্তে ওখানে যেতে চাই না আমি; আমি অবস্থান করব ভিন একটা গ্রহে, হতাশ, জীবন পলাতক, বেদনায় আচ্ছন্ন; আর সে তার সময়গুলো অতিবাহিত করবে ভিন্ন কোন পুরুষের শয্যায়; আমার স্মৃতি তখন  হয়ে উঠবে ম্রিয়মান, আপত্তি কর

-না এটা কোন সুখকর সমাপ্তি নয়, এখনও সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি; ওকে জানব আরো গভীরভাবে, আমরা সকলে জীবনকে ঠিক একইভাবে চাই না,জীবনের আনন্দ কোথায়?যদি সৃষ্টির মাঝে নিজেকে উপলব্ধি করতে না পারি? ওকে আমার চাই জীবনের প্রয়োজনেই
শৈল পায়চারি করে রাতের অর্ধেকটা অতিবাহিত করল, ঘুমিয়ে পড়ল  শেষ রাতে , কিন্তু অশান্তির সে ঘুম তার জন্য নিয়ে এল দুঃস্বপ্নঊষার আলো ফুটতেই সে তৈরি হয়ে নিল , নিজেকে বলল, এর কোন মানে নেই, যে সব যন্ত্রণা দ্বারা আমরা নিজেদের তাড়িত করি তার বেশির ভাগই কল্পনা প্রসূত একজন নির্বোধই কেবল এভাবে হাল ছেড়ে দেয়

তার মনে স্বস্তি ফিরে এল, ঊষার আলোর মতই তার মন স্বস্থানে ফিরে এল
সব কিছুর জন্যই প্রস্তত আমি , বলল সে, ওকে ছাড়াও চলবে আমার, জীবনের সকল মহীমা কেবল একটা নারীর মধ্যে সীমায়িত হয়ে থাকতে পারে না
বিপা যখন ওর সম্মুখে এসে দাঁড়াল তখন তার সব জীবন দর্শনই মেয়েটার কাল চোখ আর সোনালি বর্ণের পশ্চাতে হারিয়ে গেল

চুলোয় যাক জীবনের সকল মানে আর দর্শন, ভাবল সে, কেবল ওকে চাই আমি নির্বোধ ,অসম্মানী, অখ্যাত , কুটিরবাসী একটা লোক হতে চাই মাত্র! সমগ্র সৃষ্টির নিকট এই আমার চাওয়া
ওরা ওদের পূর্ববর্তী স্থানগুলোতে যেতে লাগল প্রায়ই, কিন্তু বিপা সর্বদা সর্বত্র যেতে রাজি নয়, টান টান একটা দড়ির প্র্রান্ত দুটি যখন পরস্পরের দিকে এগোতে থাকে তখন যেমন দড়িটা ঢিলে হয়ে যায় ওদের সস্পর্ক তেমনি হয়ে উঠতে থাকল শিথিল;

--কেন আমাকে ততটা চায় না যতটা আমি চাই , এর চেয়ে ভাল বিচ্ছেদ , ঘৃণা
বিপা নামটি সে র্দীর্ঘূ সময় নিয়ে উচ্চারণ করল
বল বলল বিপা
--গতকাল সন্ধ্যা তারাটির ঔজ্জ্বল্য দেখেছ?
--দেখেছি এটাকে এতটা উজ্জ্বল কখনই দেখিনি
--তুমি কি জান যে মঙ্গলে মানুষ প্রেরণ করা হচ্ছে?
--জানি , কিন্তু কেন ওখানে মানুষ পাঠানো হবে? পাথুরে নিষ্প্রাণ একটা গ্রহে কি করে মানুষ বাস করবে?
--সেটা হবে মানুষের দ্বিতীয় গৃহ মানুষ একটা সময় পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে আর এখন সে ছড়িয়ে পড়ছে সৌর জগতের অন্যান্য গ্রহে দুই লক্ষ হতভাগ্য মানুষ ওখানে যাবার জন্যে আবেদন করেছে, মাত্র ছয় ডলারের বিনিময়ে ওদের ওখানে পাঠানো হবে বাংলাদেশ থেকে আবেদন করেছে তিন জন
--কি শর্তে ওরা ওখানে যেতে পারবে?
--প্রথম শর্ত হল ওরা আর কোন দিন পৃথিবীতে ফিরতে পারবে না, মঙ্গলকে মানুষের বাসযোগ্য করার জন্য তাদের নিয়ে যাওয়া হবে সেখানে মিশরের ফারাওরা একদা মানুষ ধরে  এনে পিরামিড তৈরি করিয়ে নিয়েছিল , এটা যেন তেমনি একটা প্রচেষ্টা তবে  সেটা হবে মানুষের জন্য কল্যাণকর
জানতে চাইলে না কোন তিন জন  বাংলাদেশি মানুষ যাবে ওখানে?
--কারা ওই হতভাগ্যেরা?
--আমি তাদের একজন
---তুমি! কি করে সম্ভব সেটা? কি করবে ওখানে গিয়ে?

শৈল বিপার মনস্তত্ত্ব বোঝার চেষ্টা করছে, ‘সে কি সত্যি চায় আমি চলে যাইভাবল সে, না এসব মাথামুণ্ডু ভাবনার কোন মানে নেই সে বিপার উদ্দেশ্যে বলল, আমি জীবনের সংকীর্ণ সীমাকে বাড়িয়ে নিতে চাই ত্রিশ বছর কেটেছে পৃথিবীতে , ভিন গ্রহের জীব হতে মন্দ লাগবে না
এই আলাপচারিতার পর তাদের মধ্যবর্তী ব্যবধান যেন আরো বেড়ে উঠতে থাকল; আশ্চর্য, সে চায় আমি চলে যাই! প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা মানুষ সহ্য করতে পারে, এতে অন্তত সান্ত্বনা থাকে - চলে গেছে যেজন সে আমারই ছিল কিন্তু প্রত্যাখ্যাত যে তার শুধু হারানোর যন্ত্রণাই থাকে না , সেই সাথে যুক্ত হয় প্রত্যাখানকৃত অপমানের জ্বালা

অনুশোচনা করতে হবে ওকে, ভাবল শৈল, সে চায় আমি চলে যাই!
ওদের বিচ্ছেদ হল কোন ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছ্ড়াই , ছয় মাস পর শৈল চলে গেল, নাসার প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে  বিপা বিবাহ করল এক ব্যবসাদারকে শৈল পাঁচ মাস পর ফিরে এল, ভাবল আর একবার সাক্ষাত করবে ওর সাথে বিপার বিবাহ সম্পর্কিত কোন খবরই সে পায়নি, টাঙ্গনের তীরে বসে রইল সে,প্রাণের সম্পূর্ণ অনুভূতি দ্বারা উপলব্ধি করতে থাকল পৃথিবীর স্পন্দন
ওর সঙ্গে সাক্ষাত করতে হবে আমাকে ,হয়ত এরই মধ্যে অনেক কিছুই বদলে গেছে, ভাবতে থাকল সে , কিন্তু কি করে শুরু করব আমি, কিভাবে সম্বোধন করব ওকে? হয়তো সে আমার উপস্থিতি চাইবে না

শৈল বিপার বাড়ির নিকটবর্তী হয়ে জানতে পারল যে সে বিবাহ করেছে এটা শোনার পর সে চলার সব শক্তিই হারিয়ে ফেলল এত তাড়া মেয়েটার! বিবাহ করেছে একটা ব্যাবসায়ীকে ,নির্বোধ, মূর্খ একটা ব্যাসায়ী, যোগ্যতায় সে আমাকে কিভাবে হারিয়ে দিল তা আমার জানা নেই ওই ব্যবসাদারটা ওর শয্যাসঙ্গী, আদিমতম অনুভূতিগুলো বিপা ওর কাছ থেকে আহরণ করে নিচ্ছে কি করে রুচি হচ্ছে ওর?

ভাবনায় সে ডুবে গেল সম্পূর্ণরূপে, অভিমানি- ব্যর্থ একজন প্রেমিক হিসেবে বিদায় নিবে সে, এটাই ছিল তার একান্ত ই্চ্ছাপৃথিবী থেকে আট কোটি কিমি দূরবর্তী একটা গ্রহে সে যখন অবস্থান করবে তখন মনে হবে নীল পৃথিবীটার মধ্যে কেউ একজন রয়েছে যে তার কথা ভাবছে,তাই বেঁচে থাকার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি এখনও কিন্তু এটা কি হল ; এর জন্য সে প্রস্তুত ছিল না মোটেই সে যখন মঙ্গলের বুকে শারীরিক আর মানসিক যন্ত্রণায় জর্জরিত হতে থাকবে তখন অপরজন ঘৃণ্য একটা শুকরের নিকট থেকে আদিম সুখের খেলায় নিমজ্জিত থাকবে

মস্তিষ্কের যন্ত্রণাটা কমানোর জন্য সে দু হাতে মাথাটা চেপে ধরল, আস্তে আস্তে আঘাত করতে থাকল মাথায় তথাপি ভয়ানক যন্ত্রণাটা কমছে না 
কাকে প্র্রয়োজন এখানে? বলল কেউ

শৈল চাইল বক্তার দিকে, বলল, মাথায় প্রচুর যন্ত্রণা হচেছ, বিশ্রাম নিচ্ছি এখানে
লোকটা গিয়ে প্রবেশ করল সেই বাড়িটাতে যেটাকে সে বিপার বাড়ি বলে জানে, তবে এটাই সেই স্বামী যার নিকট পরাজিত  আমি যদি এর কোনটাই সত্য না হত, যদি কোন দিন সাক্ষাত না হত ওর সাথে কিন্তু মন্দ নয় এটা; সরল রৈখিক, দীর্ঘ-সুখের একটা জীবনের চাইতে দুঃখ ভারাক্রান্ত বৈচিত্রময় একটি জীবনই শ্রেয় সব কিছুর জন্যই প্রস্তত আমি শেষ বাক্যটি সে বলল উচ্চস্বরে
--একটা লোক বসে রয়েছে বাড়ির সামনে, তুমি চেন কিনা দেখতে পার স্বামিটা বলল বিপাকে
--কি চায় সে?
---বলছে মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা

বিপার হৃদস্পন্দন হঠাৎ যেন উত্তেজিত হয়ে উঠল, লোকটা কে, সে সেটা অনুমান করে নিতে পারছে; তবে সে ফিরেছে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে? নিশ্চত হবার জন্যে সে এগিয়ে এল, ফিরে এল ততোধিক  হতাশ, বিমর্ষ চিত্তে মাথা নিচু করে বসে রয়েছে যে লোকটা, সে যে কে, তা চিনে নিতে তার কোন অসুবিধাই হল না ওর কাঁধের ধরণটাই তাকে চিনে নেবার জন্য যথেষ্ট
দিনের অবশিষ্ট সময়টা ওর কাটল, এলোমেলো , বিস্রস্ত, হতাশা- যন্ত্রণায় অস্থির মাথা নিচু করে বসে থাকা শৈলের মূর্তিটা তার নজরে ভাসছিল দুঃস্বপ্নের মত ওর মুখমণ্ডলের একাংশই সে দেখেছে তাতেই সে কল্পনা করে নিয়েছে ওর সম্পূর্ণ মুখচিত্রশৈলের প্রস্থানের পর বিপা এসে বসল সেই স্থানটিতে, ওর দেহের উষ্ণতা এখনও শিথিল হয়ে যায় নি, আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল সে, সন্ধ্যা তারাটি এখন দৃশ্যপটে নেই, বরং চাঁদের নিকটবর্তী জ্জ্বলজ্জ্বলে মঙ্গল গ্রহটি নজরে এল, এটাই তবে মঙ্গল গ্রহ ,পৃথিবী থেকে অনেক দূরে; তারাটি যেন আরো উজ্জ্বল আজ- অতিথির আগমন প্রত্যাশায়; সত্যি কি সে যাবে ওখানে!ভাবল বিপা

কি করে সম্ভব সেটা? কিন্তু সে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে সেটা তো সত্য হতে পারে প্রশিক্ষণের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে বিপা মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগল, কারণ সে জানে, শৈল সত্যি যাবে ওখানে -একজন ব্যর্থ প্রেমিকের পক্ষে সবই সম্ভব সে আবার চাইল মঙ্গলের দিকে , চাঁদের ডানপাশে ওর অবস্থান জ্বলছে যেন হৃদয়ের সবটুকু আলো ছড়িয়ে দিয়ে ওদের কোন কষ্ট নেই কারণ ওরা জড় ; প্রাণিরা কষ্ট পায় বাহ্যিক, আর আমাদের জন্য সব ধরণের কষ্টই সংরক্ষিত যেহেতু আমরা মানুষ-

-চেতনাবাহী --মননশীল
শৈল বাসায় ফিরে গেল নির্ধারিত সময়ের পূর্বে, যতদ্রুত সব সমাপ্ত হয় ততই মঙ্গল, কিন্তু আমরা স্মৃতিকে পশ্চাতে ফেলে যেতে পারি না কারণ স্মৃতিই আমাদের অস্থিত্বতা আমাদের অস্তিত্বকে ধারণ করে আর যন্ত্রণা দিতে থাকে প্রতিনিয়ত।
--আপনার তো এখনি প্রত্যাবর্তনের সময় নয় বললেন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের সহকারি পরিচালক
--এখানেই পৃথিবীর অবশিষ্ট দিনগুলো অতিবাহিত করতে চাই্ বলল সে
---পরিবারের সঙ্গে অবস্থান কর, দেখে নাও পৃথিবীকে, সেজন্যই চার মাসের ছুটি দেওয়া হয়েছে
--আমার ছুটির দরকার নেই , ছুটিও প্রয়োজনাতিরিক্ত দীর্ঘ পৃথিবীতে কেটেছে ত্রিশটি বছর এটাই কি যথেষ্ট নয়? যত শীঘ্র সব শেষ হয়ে যায় তত মঙ্গল
--আমরা কোন হতাশ -পলায়নপর অভিযাত্রী চাই না, আমাদের দরকার কর্মঠ, অনুসন্ধিৎসু, ইতিবাচক মনোভাবের মানুষ
---প্রকৃতি আমাদের ওসব অলঙ্কারেই ভূষিত করেছে, আপনারা নিশ্চয় কোন জড় রোবট চান না?
শৈলকে অপেক্ষা করতে বলে সহকারি পরিচালক প্রস্থান করলেন; অল্প সময় পরেই নিকটবর্তী কক্ষ থেকে চলার শব্দ শোনা গেল, ভারি ভারি পদক্ষেপে আসছে কেউ, সে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল সেদিকে দরজা খুলল, পর্দা সরিয়ে এগিয়ে আসতে থাকল একটা যন্ত্র মানব!
মোটা মোটা হাত পা, গোড়ালির নিচের অংশ চওড়া, মাথাটা যেন একটা ওলটানো বালটি  ভীতিকর চোখগুলো পলকহীন
--দুঃখিত অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হল যান্ত্রিক শব্দে বলল রোবটটি
শৈল তাকিয়ে রইল বিস্মিত হয়ে, ঠিক দেখছি কি আমি? যে যন্ত্র মানবের কথা কল্প কাহিনীতে পড়েছি, হলিউডের সিনেমায় দেখেছি সেটা এখন আমার সম্মুখে! আবার কথাও বলছে আমার মতই!
--বিস্মিত হবেন না , বলল যন্ত্রমানবটা , আপনারা মানুষেরা সহজেই মুখটাকে হা করে দেন , কিন্তু আমার হা করার মত অত বড় মুখ নেই আমার নাম মার্স লিডার সংক্ষেপে লিডার বলতে পারেন, কেননা আমিই আপনাদের সত্যিকারের লিডার এবার আপনার নাম বলুন
--আমার নাম শৈল দেব সে বলল এমন ভাবে যেন কোন জড় পদার্থের সাথে কথা বলছে
--আপনি এতটা উত্তেজিত কেন ? আপনার মস্তিষ্ক স্বাভাবিক নেই
--পৃথিবী ত্যাগ করছি চিরকালের জন্য তাই উত্তেজিত আমি
--মিথ্যা বলছেন, আপনি কারো বিষয়ে চিন্তিত , মানব মস্তিষ্কের অনেকটাই জানা আমার আর অসত্য কথা বলার জন্যে বাতিল হয়ে যেতে পারেন
--এমন একজনকে আমি পেছনে ফেলে এসেছি যার চিন্তা  মস্তিষ্কের উত্তেজনা কেবল বাড়িয়ে চলেছে কিন্তু বাংলা বলছ কি করে ?.
--পৃথিবীর দু হাজার ভাষা আমার জানা রয়েছে, এমনকি ভাব- ভঙ্গি, কণ্ঠস্বর বিশ্লেষণ করেও মনোভাব বুঝতে পারি
---কবে পাঠানো হবে আমাদের?
--গোপনীয় তথ্য জানাতে পারি না আমি
--তবে এমন কিছু বল যা গোপনীয় নয়
--২০১৬ সালে দশ জনের একটি দল মঙ্গলের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাবে, আমাকে হিসেবে ধরলে সংখ্যাটি হবে এগার
--কিভাবে যাব আমরা?
--মার্স-২০১৬রকেটের মাধ্যমে পাঠানো হবে আপনাদের, মঙ্গলে অবতরণ করবেন ২০১৮ সালের শেষ মাসে
--তুমিও যাবে সেখানে কি কাজ তোমার সেখানে?
--আমার কাজ তোমাদের নিয়ন্ত্রয়ণ করা , আমার মাধ্যমেই তোমাদের নির্দেশনা আসবে, আমার নির্দেশ অনুসারে কাজ করতে হবে তোমাদের তোমরা মানবেরা কাজের চেয়ে ভাব বেশি , তাই সম্ভবত আমাকেই নেতা  বানানো হবে
---তোমার তো ভাবাবেগ নেই, তাই তুমি মানুষ নও
---ভাবাবেগ কি কাজে লাগে ?এটা কি শুধু মস্তিষ্ক উত্তেজিত করার জন্য, যেভাবে তোমার মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়ে রয়েছে?
---ভাবাবেগ সব সময় কাজের নয়, বিশেষত তুমি যে কাজের জন্য তৈরি তাতে ভাবাবেগের দরকার নেই
--তাহলে আমার দুঃখ করার কারণ নেই মনে হচ্ছে
---এখন মঙ্গল সম্পর্কে কিছু বল
--মঙ্গলের ব্যাস ৬৭৮৭ কিমি, পৃথিবী থেকে দূরত্ব কোটি কিমি, সূর্য থেকে দূরত্ব ২৩ কোটি কিমি, আহ্নিক গতি ২৪ ঘণ্টা ৪০ মিনিট প্রায় , বার্ষিক গতি ৬৮৭ দিন, , কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমান ৯৫ %,পৃথিবী থেকে মঙ্গল দেখা যায় লালচে উজ্জ্বল তারার মত 
-- এসব জানতে চাই না আমি , জানি এসব ; বরং আমাকে জানাও, ওখানে গিয়ে কী কী কাজ করতে হবে আমাদের , কিভাবে ওটাকে মানব বসবাসের উপযোগী করা হবে, এই সব জানাও     
  --মঙ্গল হবে মানুষের দ্বিতীয়গৃহ, সেটাকে বসবাস উপযোগি করাই হবে আসল কাজ
---কি ধরণের কাজ হবে সেগুলো?
---খনি খনন করতে হবে, গৃহ নির্মান করতে হবে মাটির তলে, স্থাপন করতে হবে গবেষণাগার, তৈরি করতে হবে পানি -অক্সিজেন
--কিছু আলোক চিত্র দেখানো কি সম্ভব?
--আমার সংগ্রহে নেই তবে ব্যবস্থা করছি
তাদের নিকটবর্তী কম্পিউটারটি অন হতেই শৈল বিস্মিত হল, মার্স লিডার তাকে বলল, কেন ভুলে যাচ্ছ আমিও একটি কম্পিউটার, সেটা অন করেছি আমিই এখানকার সকল কম্পিউটারের সঙ্গে আমার সংযোগ রয়েছে
---তোমার তথ্য চুরি হতে পারে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পার-।
--- সেটা সম্ভব নয়, উন্মুক্ত নেটের সাথে আমার সংযোগ নেই তাছাড়া ষষ্ঠ প্রজন্মের একটি কম্পিউটারের নিকট থেকে তথ্য হ্যাক করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়
এনিমেটেট চলচ্চিত্র দ্বারা মার্স লিডার শৈলকে দেখিয়ে দিল মঙ্গল অভিযানের কর্ম যজ্ঞের রূপ
---অনেক বড় কর্মকাণ্ড এটা , আমরা ভাগ্যবান যে আমরা এতে অংশ নিতে পারছি, আমরা হব মানব প্রজাতির প্রথম এলিয়েন,যারা পৃথিবীর বাইরে মানবের জন্য গড়ে তুলবে প্রথম আবাস 

সেখানে কোন এক সময় গড়ে উঠবে সভ্যতা, তারপর মানুষ পাড়ি দেবে আরো দূরে- সৌর জগতের অন্য কোন গ্রহে; মানুষ একটা সময় দেশ জয় করেছে, এখন তারা গ্রহ জয় করছে, এভাবে তারা জয় করবে সৌরজগৎ, গ্যালাক্সি, মহাবিশ্ব একটা সময় আসবে যখন বসবাসের জন্যে কোন গ্রহেরও দরকার হবে না , মানুষ শূন্যে ভেলা বানিয়ে বসবাস করতে থাকবে তখন পুরো ব্রহ্মাণ্ডই হবে তার ঘরতখন আমরা থাকব না কিন্তু আমাদের স্মৃতি থাকবে চির অমর হয়ে পিরামিড নির্মাতারা আর নেই কিন্তু তাদের আমরা ভুলে যাই নিপুনরায় দশ মাসের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হল, যে দশজন হবে প্রথম নভোচারি তারা হয়ে উঠেছে দক্ষ এবং প্রচণ্ড রকম আত্মবিশ্বাসীইতোমধ্যে মার্স লিডারের সাথে সকলের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে,দুনিয়ার তাবৎ জ্ঞান বন্দী হয়ে রয়েছে ওর ছোট্ট  চিপের মধ্যে,সকলে মার্সের নিকট থেকে শিখছে, সে সকলকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, পরামর্শ দিচ্ছে, জ্ঞানের যোগান দিচ্ছে

শেষবারের মত ওরা আরো তিন মাসের ছুটি পেল,সকলে ছুটে গেল ক্ষুধার্ত চিত্তে, শৈল ছুটির তিনটি মাসের মধ্যে দু মাস ক্যাম্পে কাটিয়ে দিল জ্ঞানার্জন আর কর্ম দক্ষতা আরো বাড়িয়ে নেবার জন্যে শীঘ্রই সে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করল তার কর্ম নিষ্ঠা দ্বারা শেষ মাসটির জন্যে সে বাড়িতে যাবার সিদ্ধান্ত নিল
--বিপার সঙ্গে দেখা করবে কি? বলল মার্স
--এখনও নামটি ডিলিট করনি? বলল শৈল, বিগত মাসগুলোতে বিপার বিষয়ে কোন কথাই হয়নি, অথচ সে নামটা সঠিক সময়ে উঁস্থাপন করল
--কোন কিছুই ডিলিট করার দরকার হয় না আমার, আমার হার্ডডিক্সে স্থানের অভাব নেই
--কখনও কখনও মনে হয় তুমি আমাদের মতই বুদ্ধিমান মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পার তুমি যা পারি না আমরা আমরা নিজেদের বৃথাই বলি শ্রেষ্ঠজীব।
--কারণ হল আমি চিন্তা করি লজিক দ্বারা, মানুষ সর্বদা লজিক মেনে চলে না, তাই তারা বিভ্রান্ত হয়
--তোমার লজিক কি বলে, আমার ওর সঙ্গে সাক্ষাত করা উচিত?
--সেটা তুমিই নির্ধারণ করবে, তবে এটা মনে রাখার প্রয়োজন  যে, তুমি পৃথিবী ত্যাগ করবে চির কালের জন্যে
--বিস্ময়কর কম্পিউটার তুমি; ফিরে আসব শীঘ্রই
--শেষ দিনগুলো কাজে লাগাও, আর সর্বদাই তোমাদের সঙ্গে আমার সংযোগ থাকবে যে কোন প্রয়োজনে আমি সেটা তোমাদের সরকারকে জানাব, তারা তোমাদের প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে তোমরা এখন বিশ্ব নাগরিক
--আমরা যোগাযোগ করতে পারব না তোমার সাথে ?
--না , সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়
বাড়িতে ফিরে শৈল ভাবল বৃথাই এই প্রত্যাবর্তন, এটা কারই সুখ বৃদ্ধির কারণ হবে না
সেনুয়ার তীরে বসে রইল সে, অতীতের স্মৃতিগুলো তাড়িত করতে থাকল তাকে সব কিছু পূর্বের মতই রয়েছে কিন্তু ইতোমধ্যে তার জীবনের অর্ধেকটা সমাপ্ত হয়ে গেছে

ওর কাছে যাওয়া উচিত কি আমার? ভাবতে থাকল সে, না কখনই নয় সে চায় আমি চলে যাই , ওর নিকট পূর্বে ছিলাম করুণার পাত্র আর এখন -কলঙ্কিত অতীত এই ভাল, সব কিছু মিটে যাক ;সব কিছু মিটে যাবে আর বিশটি দিনের ব্যবধানে , সে চায় আমি চলে যাই!
 তারাটি আজ আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, অতিথির আগমন বার্তায় সে যেন আনন্দিত ওর দিকে তাকিয়ে শৈল বলল, পৃথিবীর বাইরে আমি হব মানব জাতির প্রথম দূত, গর্বিত আর সুখী হবার জন্যে  এই কি যথেষ্ট নয়? চুলোয় যাক বিপা আর তার স্বামিটা। শৈল বাড়ি ফিরল গভীর রাতে, পরের দিনটি সে অতিবাহিত করল ঘুমিয়ে; সে নিজেকে বলল, ভারতীয় দর্শন বলে যে, জীবনটি মায়া , ক্ষণস্থায়ী, তাই সকল কিছুর প্রতি হতে হবে নিঃস্পৃহ, কর্ম হবে নিষ্কাম, অন্তর হবে সুখ- দুঃখের অতীত তবেই জীবনে নেমে আসবে শান্তি সেই পথটাই বেছে নেব আমি মানব জাতির প্রথমদূত যেউই পোকা সদৃশ একটা নারীর জন্য তার মূর্ছা যাওয়া শোভা পায় না আহাম্মকি কারবার যত
বিপার গৃহামুখে যাত্রা করেও সে পুনরায় প্রত্যাবর্তনে মনোযোগ দিল, ব্যর্থ প্রেমিক সর্বদাই চিতা বাঘের মতই প্রতিহিংসা পরায়ন, সে স্বগতোক্তি করল, সে চায় আমি চলে যাই! তবে তাই হোক
কেবল ঘৃণা আর প্রতিহিংসা বশত সে প্রত্যাবর্তনে মনোযোগ দিল তাই নয়, তার নিজের উপরেও আস্থা নেই ; বিপার হলটে মুখবর্ণ, বক্র অধর, কৃষ্ণবর্ণ নেত্র পল্লব দর্শনে যে ছাই চাপা পড়া কামনার অগ্নি পনরায় জ্বলে উঠবে সেটা নিশ্চিত আর এটা হবে ভয়ানক ব্যাপার
অবশেষে ২০১৬ সালের বহু প্রত্যাশিত সেই দিনটি এসে গেল, নাসা থেকে উৎক্ষিপ্ত হবে যানটি, পাঁচলক্ষ মানুষ সমাবেশ হয়েছে উৎক্ষেপন কেন্দ্রেএই প্রজেক্টের প্রধান উদ্যোক্তা জনতার উদ্দেশ্যে বললেন, নিজের সম্পর্কে আজ আর কিছূই নয়-আজ শুধু বলব নভোচারিদের সম্পর্কে তারা মহাশূন্যে  মানব জাতির প্রথমদূত; মানুষেরা যতদিন তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে ততদিন তাঁরাও থাকবেন অমর হয়ে এই জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে অসীম সময় পর্যন্ত; নভোচরীগণ- আজ যারা আত্মত্যাগ করছেন এটা একদা সুফল বয়ে আনবে সমগ্র মানব জাতির জন্যে সবশেষে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাদের সমস্ত বিজ্ঞানি, কর্মীদল, সহযোগী প্রতিষ্ঠান সমূহকে
এবার পর্যায়ক্রমে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে নভোচারিদের; সার বেঁধে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওরা, সমগ্র পৃথিবীর মানুষ নজর রেখেছে ওদের উপর

বিপা এসবের কোন খবরই রাখত না, সাংসারিক জীবন বহির্ভূত আর সকল কিছুই ছিল তার অজানা কিন্তু শেষের দিনগুলোতে এতটা বেশি প্রচার হয়েছে যে সেও টিভির পর্দায় নজর রাখতে লেগেছে তাছাড়া ওই নভোচারী দলটার মধ্যে এমন একটি লোক রয়েছে যে তাকে কষ্ট দেবার জন্যে একটা অভিনব পদ্ধতি বেছে নিয়েছে সে বিগত দিনগুলোতে মঙ্গল সম্পর্কিত সব আলোচনা শুনেছে,পড়েছে পত্রিকার সকল খবর, পত্রিকা কাটিং করে সংরক্ষণ করেছে সকল নভোচারির ছবি শৈলকে দেখানো হল যখন তখন সে হয়ে পড়ল  পলকহীন, কতই না পরিণত আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞ দেখাচ্ছে ওকে! হ্যাঁ, পরিণত একজন মানুষ হয়ে উঠেছে সে হয়ত এই রূপটাই চেয়েছিলাম ওর মধ্যে, শিশুসুলভ শৈল মহাকাশ পাড়ি দিচ্ছে! পার্বত্য উপত্যকায় যেমন হঠাৎ হড়কা বান এসে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায় তেমনি বিপার হৃদয়ের কোণে লুকিয়ে থাকা ভাবাবেগ এসে হাজির হল কোন পূর্ব নির্দেশ ছাড়াই আর সেটা পূর্বের তুলনায় আরো গভীর আরো তীব্র এবং বেদনাবাহী ঝাপসা চোখগুলো সে মুছে নিতে লাগল বার বার

--আপনারা কি মঙ্গলে এলিয়েন হিসেবে আবির্ভুত হয়ে ওটাকে ধ্বংস করতে চাইবেন-যেমনটা আমরা দেখি হলিউডের সিনেমায় বললেন সাংবাদিক
--তেমন কোন সম্ভাবনা নেই বললেন একজন নভোচারী, আমরা সর্বদাই শান্তির বাণী বহন করব।
--এমন একজনের নাম বলুন, এই বিদায় বেলায় যার নাম বেশি মনে পড়ছে সাংবাদিক বললেন শৈলকে শৈল কোন উত্তর দেবার আগ্রহ বোধ করছে না সে চাইছে সব কিছু যতদ্রত সম্ভব  সমাপ্ত হয়ে যাক কিন্তু তার অন্তরে এই প্রশ্ন উত্থিত হল,বিপা কি টিভির পর্দায় নজর রেখেছে।দেখছে আমাকে এই বিদায় লগ্নে?
--তার নাম বিপা বলল মার্স লিডার
--কে আপনি? প্রশ্ন করলেন সাংবাদিক
-- আমি ষষ্ঠ প্রজন্মের আল্ট্রা সুপার কাম্পিউটার এই অভিযানের নেতা
---বিপা সম্পর্কে বলুন
--বিপা এমন একটি নাম যার এই অভিযনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই কিন্তু এই নভোচারির অন্তরে শক্তির যোগান দেয়
বিপার অশ্রুসিক্ত চোখ জলে প্লাবিত হয়ে উঠল, সে আরো ব্যাকুল হয়ে উঠল এটা দেখে যে, শৈলকে সাংবদিক বারবার প্রশ্ন করেও কোন উত্তর পেল না সে ভাবল, মানুষ হল সেই নির্বোধ প্রাণি যে বেছে বেছে খারাপ জিনিসটিই ক্রয় করে আর এর জন্যে দেয় উচ্চ মূল্য
নভোচারিরা যানে অবস্থান নেবার পর জনতা স্তব্ধ হয়ে রইল, ধোঁয়ার কুণ্ডলিতে হারিয়ে গেল যানটা, তারপর সোজা উঠে গেল আকাশে, এবং হারিয়ে গেল চিরদিনের জন্য মানুষ তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে , সেখানে আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না বিস্তৃত আকাশে যানটি হারিয়ে গেল চিরকালের জন্য।নভোযানটি গিয়ে অবস্থান নিল চাঁদের কক্ষ পথে শেষবার পৃথিবীকে অভিবাদন জানিয়ে ওরা পাড়ি জমাল  মহাশুণ্যে।আজ থেকে দু বছর পর ওরা মঙ্গল পৃষ্ঠে অবতরণ করবে।

--আজ রাতে মঙ্গল গ্রহটি উদিত হয়েছে আরো উজ্জ্বল হয়ে, মানব জাতির জয়যাত্রায় সেও যেন আনন্দিত
অথবা সেটা এতটা উজ্জ্বল হয়ে উদিত হয়েছে আমার যন্ত্রণাকে আরো বাড়িয়ে তুলবার প্রয়োজনে ওরা আলো ছড়িয়ে দেয় আর আমি আলো শোষণ করি তাই ওরা উজ্জ্বল আর আমি কালো; ভাবল বিপা অশ্রুসিক্ত চোখে সে তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে আমাকে কষ্ট দেবার ভাল পথ বেছে নিয়েছে সে! আমরা মানুষেরা অতি নির্বোধ কারণ আমরা জানি না আমরা কি চাই  
---ওরা এখন কি করছে ওখানে? সাত দিন  পর বিপা প্রশ্ন করল সোনালিকে, জানি না কি ভাবে সময় কাটছে ওর
---মাত্র সাতটি দিন অতিবাহিত হয়েছে, ওরা মঙ্গল পৃষ্ঠে অবতরণ করবে দু বছর পরে বলল সোনালি,ওরা যখন মঙ্গলে অবতরণ করবে তখন   সালটা হবে ২০১৮
--এতগুলো দিন থাকবে ওরা যানের ভেতরে! একটা গ্রহে পৌঁছতে এতটা সময় দরকার?
--এটাই সত্য, প্রকৃতির অসীমতার নিকট অতি তুচ্ছ আমরা
--কেন ওদের পাঠানো হল চিরদিনের জন্য! আমি এর কোন কারণ দেখি না

সোনালি বলল, এটাই নিয়ম, কাউকে না কাউকে আত্মত্যাগ করতেই হয়
ওরা উভয়ে তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে , মানুষ একদিন প্রকৃতির নির্মমতাকে জয় করবে , সেই দিন আর  দূরে নেই আকাশের তারাগুলো রইল নির্বিকার- নিরাসক্তমানুষের আনন্দ বেদনার 
কাহিনী ওদের জড় হৃদয়কে উদ্বেলিত করে না। 



আরো পড়ুন--


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন