বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০১৪

গণসেবক-(প্রহসন)


                                                              চার্বাক সুমন
‘জনগণ’ হইল ঊনবিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার, কহিলেন গণসেবক ।
ইহা কিরূপ প্রকারে হইতে পারে? তৎকালে বিপুল পরিমাণ মহামানবেরা দর্শন দান করিয়াছেন, জনৈক সভ্য ভীতি বর্জন করিয়া কহিলেন, ‘জনগণ’  কী প্রকারে শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার হইল? -তাহা অনুধাবন করিতে ব্যর্থ হইলাম।

--তৎকালে বৃহৎ বৃহৎ জ্ঞানী আসিয়া স্কুল বালকদিগের বাড়ির কাজ বাড়াইয়া দিয়াছেন, ইহাতে বালকদিগের তৎপরতা বাড়িয়া গিয়াছে-বিপরীতক্রমে মাস্টরদিগের বেতন নিম্নগামী হইয়াছে, কহিলেন গণসেবক, তাহাতে সমাজ আগাইয়া গিয়াছে-রাজনীতিকগণ কর্মমূখর হইয়াছেন; তথাপি শ্রেষ্ঠ আবিষ্কারের সম্মান উহাদিগের প্রাপ্ত হইল না।

--আমাদিগের মস্তিষ্ক উত্তম প্রকারে ক্রিয়া না করিবা হেতু পুনরায় অনুধাবনে ব্যর্থ হইলাম, কহিলেন অপর জনৈক সভ্য,ভাবিয়া দেখুন অষ্টাদশ -ঊনবিংশতি শতকে বিশ্বব্যাপীয়া জ্ঞানীগণের আগমন হইয়াছিল; বোধ করি বিধাতা ভ্রমবশত এককালে সকল মনীষীগণকে প্রেরণ করিয়া থাকিবেন। তাহারা সাহিত্য করিয়াছেন, দিক্ দর্শন করাইয়াছেন, বিজ্ঞান-সূত্র দান করিয়াছেন, কেহবা রাজনীতি করিয়া আজি অমরলোক প্রাপ্ত হইয়াছেন।

কিন্তু ইহাদিগের কেহই ‘জনগণ’-নাম্নী কোন বস্তু বা সূত্র দিয়া গিয়াছেন বলিয়া বোধ করিতে পারি না। অজ্ঞের অক্ষমতা মার্জনা হয়।
গণসেবক অজ্ঞ সভ্যকে মার্জনা করিলেন পর বক্র সংকট ঋজু করিতে থাকিলেন, তুমি ভ্রম করিতেছ; প্রথমত: জনগণ বস্ত নহে, দ্বিতীয়ত: উহা বিজ্ঞানের সূত্রও নহে। ইহা হইল যুগের মহান আবিষ্কার তাহার তুলনা অন্বেষণ করিয়া মিলিতেছে না।
গণসেবক নানাবিধ প্রকারে জনগণের পরিচয় দান করিলেন, তাহার উপযোগিতা ব্যাখ্যা করিলেন, এই সকল বিশ্লেষণ শ্রবণ করিয়া সভ্যগণ বিভ্রান্ত হইয়া নানাবিধ কৌতূহল প্রকাশ করিতে থাকিলেন-

--জনগণ কি তাহা হইলে বস্তু বিশেষ?
--জনগণ  তবে বিজ্ঞানের সূত্র বোধ হইতেছে ।
--ইহা হইতে পারে ব্রহ্ম সদৃশ অজ্ঞেয় সত্ত্বা। পঞ্চ ইন্দ্রিয় ইহার মহিমা প্রকাশ করিতে পারে না।

--ইহা আগ্নেয়গিরি যাহা হইতে কেবল শক্তি নির্গত হইতে থাকে।
গণসেবকের বক্তৃতা শ্রবণ করিয়া সভ্যগণ বিভ্রান্ত হইয়া বিবাদে জড়াইয়া পড়িলেন, জনগণ কিরূপ হইতে পারে তাহার খসড়া তৈয়ার করিতে লাগিলেন এবং গণসেবকের নিকট তাহারা জনগণের ভিন্ব ভিন্ন জাগতি ও পারত্রিক আকৃতি পেশ করিলেন। তাহা অবলোকন করিয়া গণসেবক কহিলেন, তোমাদিগকে সমঝাইতে গিয়া অকারণ কাল ক্ষেপণ করিলাম।
উঠিয়া আইস –চাক্ষুষ করিবে।

গণসেবক সভ্যগণকে লইয়া বাতায়ন সন্নিকটে গমন করিলেন, উহার আবরণ -বস্ত্র অপসারণ করিয়া দিলে অপরাহ্নের শীতল সমীরণ আসিয়া তাহাদিগের প্রাণ জুড়াইয়া দিল। গণসেবক কৃষিক্ষেত্র পানে চাহিয়া কী এক বস্তু অন্বেষণ করিতে থাকিলেন, তাহার নজরে পড়িল বর্ষার সুগন্ধহীন কর্দম, কতিপয় হালের বলদ এবং কর্ষণজীবীগণের কতিপয় নিরীহ  ছাগু।

--জনগণ দেখিবে আইস, কহিলেন গণসেবক, খেতের পানে চাও-জনগণ দেখিতেছ কি?
--নজরে পড়িতেছে না মহোদয়, জনগণ নাম্নী কোন বস্তু নজর কাড়িল না ।
অতঃপর গণসেবক তর্জনী দ্বারা সকল বিষয় স্পষ্ট করিয়া দিলেন; তাহার তর্জনী অনুসরণ করিয়া সভ্যগণ অবলোকন করিলেন যে, ক্ষেত্র প্রান্তে ‍দুর্দন্ধযুক্ত কর্দম হইতে পদযুগোল বলপূর্বক  নিষ্কাষণ করিতে করিতে জনৈক অস্তি-চর্ম সার ব্যক্তি আগাইয়া আসিতেছে ; উহার কেশ বোতল রঙ ধারণ করিয়াছে, বক্ষভ্যন্তরস্থ অস্থি দৃশ্যমান রহিয়াছে, গাত্রবর্ণ মসীসদৃশ, পরিধানে দৃষ্টিগোচর হইতেছে লুঙ্গি, মস্তোকপরে ছিন্ন –গন্ধযুক্ত গামছা সর্পরূপ কুণ্ডলাকার ধারণ করিয়া শোভা নাশ করিতেছে।

গণসেবক উহার পানে অঙ্গুলি প্রসার করিয়া কহিলেন, এই হইল  জনগণ।
--আজি এক অদৃষ্টপূর্ব জন্তু দর্শন করিয়া ধন্য হইলাম। সভ্যগণ কহিলেন, কিন্তু বিস্ময়বোধ করিতেছি ইহা কী প্রকারে হেথায় আগমন করিল! কোনকালে এইরূপ প্রাণী দৃষ্টিগোচর হয় নাই। তবে ইহা কী প্রকারে আগমন করিল? ইহা কি বাংলার নিজস্ব ফ্লোরা –ফাউনা অথবা ভারত হইতে আগমন করিয়াছে?-যেরূপ প্রকারে থাকিয়া থাকিয়া ভারত হইতে চিতা কিংবা মেছো বাঘ সীমান্ত পার হইয়া আসিয়া পড়ে এবং পাবলিক উহাদিগকে পিটাইয়া পটল তুলিতে প্রেরণ করিয়া থাকে। -ইহা কি হইতেছে অনুরূপ প্রাণী?

--তাহা নহে , কহিতে থাকিলেন অপর সভ্য, এশিয়া দেশে এই রূপ প্রাণী কভু দৃষ্টি মধ্যে প্রবেশ করে নাই। সেই হেতু আমি নিশ্চয় করিয়া কহিতেছি যে, ইহা অবশ্যই আফ্রিকা বা চিন দেশীয় জঙ্গল হইতে আসিয়াছে।

--মাপ করিবেন গণসেবক মহোদয়, জনৈক সভ্য কহিলেন, ইহা কী বস্তু আহার করিয়া বাঁচিয়া থাকে?



--ইহার খাদ্য পত্র- ধান্য, এবং তাহা স্বয়ং উৎপাদন করিয়া থাকে।
--বিস্ময় প্রকাশ করিলাম –এরূপ কোন জন্তু আজিও প্রত্যক্ষ করি নাই যাহা আপনার ভোজ্য স্বয়ং উৎপাদন করিতে পারে।
--ইহাই সত্য, ইহা কম আবিষ্কার নহে- ইহা সর্বকালের সেরা আবিষ্কার-ভাবিয়া দেখ মনে-ইহা আপনার খাদ্য স্বয়ং সংগ্রহ করিয়া লইতেছে উপরন্তু আমাদিগকেও লাভবান করিতেছে। ইহার পালনে কোন ক্ষতি নাই।
--আপনি ইহাকে পালন করিয়া থাকেন! আফ্রিকার বন হইতে আসিয়াছে যে প্রাণী তাহাকে পালন করা সুসাধ্য নহে। মাপ করিবেন গণসেবক মহোদয়, আর একটি বিষয় জানিতে ইচ্ছা প্রকাশ করিতেছি-ইহা কী হিংস্র? শুনিয়াছি, যে প্রাণীর যত গভীর বনে বাস সে তত হিংস্র হইয়া উঠে। ইহার বিষয়ে কী মত প্রকাশ করিবেন?
--ইহা কদাপি হিংস্র নহে, ইহা ছাগু অপেক্ষা নিরীহ প্রাণী । ছাগু যেরূপ ক্রোধ হইলে পত্র চর্বণ করিতে থাকে এবং ক্রোধ বর্ধিত হইলে পলায়ন করিতে তৎপর হয় ইহাও অনুরূপ আচরণ করিয়া থাকে। অতএব ভীত হইও না, ইহার তীক্ষ্ন দন্ত নাই; তীক্ষ্ন –বলবান থাবা হইতেও স্রস্টা ইহাকে বঞ্ছিত করিয়া আমাদিগের নিরাপত্তা বিধান করিয়াছেন।

এই মহান দান হেতু স্রস্টাকে বারংবার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিতেছি-তাহার করুণার শেষ নাই। তিনি ডাব মধ্যে দিয়াছেন সুস্বাদু পানীয়, জীব মধ্যে মাংস, ফল মধ্যে সুরা, নারী মধ্যে মদিরা-আর কী চাহ! ইহাই কী যথেষ্ট নহে-হে অকৃতজ্ঞ মানব সন্তান?
--উহাকে আরও নিকটবর্তী হইয়া প্রত্যক্ষ করিব। কহিলেন সভ্যগণ
--লাঠিয়াল প্রেরণ করিতেছি তবে । কহিলেন গণসেবক মহোদয়, এখনই ধরিয়া আনিবে।
--মহোদয়, পুনরায় বিস্ময় প্রকাশ করিতেছি; লাঠিয়াল কোথা হইতে আসিল?-উহারা তো ঊনবিংশ শতকে বিলোপ হইয়াছে, আজি তাহারা সহজ লভ্য নহে। তাহারা হইল আর এক আজব প্রাণী-। বোধ করিতেছি উহাদিগের বংশ লোপ পায় নাই। কিংবা টাইম মেশিন দ্বারা কতিপয় আমদানি করিয়া আনিয়াছেন।
--ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করিতেছ-ইহারা লাঠিয়াল নহে, ইহারা ততোধিক ভয়ানক প্রজাতি, মধুমক্ষী যেরূপ রাণীকে ঘিরিয়া রক্ষা করিয়া থাকে উহারাও অনুরূপ গণসেবকদিগকে হেফাজত করিয়া থাকে।

রক্ষক আসিয়া উপস্থিত হইলে গণসেবক তাহাকে মাঠ মধ্যে জনগণ দেখাইয়া ধরিয়া আনিতে আদেশ করিলেন, শিকারীর আদেশ পাইলে হাউণ্ড আহ্লাদিত হইয়া ওঠে; রক্ষক তদ্রুপ আমোদ প্রাপ্ত হইয়া ক্ষেত্র পানে ধাবিত হইল, কিয়ৎকাল অতিক্রান্ত হইলে রক্ষক জনগণের কণ্ঠে রজ্জু বন্ধন করিয়া  হাজির করিল।

রক্ষক কহিল, ইহা বড় নচ্ছার প্রাণী আছে, কেবল পলায়ন করিতে চাহে, যেদিক পানে রজ্জু টানিবেন –ইহা তাহার উল্টা পানে ধাবিত হইতে চাহিবে। ইহা ছাগুর স্বভাব প্রাপ্ত হইয়াছে। হইতে পারে উহারা ছাগুর সগোত্র হইতে বিবর্তনের রজ্জু ধরিয়া নামিয়া আসিয়াছে। ছাগু সকল কী প্রকারে ফেসবুক হইতে মাঠ মধ্যে আসিল ভাবিয়া পাইলাম না!  দুষ্ট বালকগণ  অধিক পরিমান ডাউনলোড করিয়া থাকিতে পারে।
অতঃপর সকলে মিলিয়া জনগণকে নিরীক্ষণ করিতে থাকিলেন, এবং সকলে এক মত হইলেন যে আরও অধিক পরিমাণে ইহার আবাদ করিতে হইবে; বঙ্গদেশ ইহাদের আবাদ করিবা হেতু যথেষ্ট উর্বর হইয়া আছে।  উৎপাদন সন্তোষজনক হইলে বৈদেশিক মুদ্রাও আসিবে।   

কতিপয় সভ্য অতিমাত্রায় উৎসাহিত হইয়া জনগণের ফটো তুলিয়া সংবাদপত্রে প্রকাশ করিয়া দিলেন; ইহাতে দেশবাসী আতঙ্কিত হইল এবং কর্মব্যস্ত শাসকগণ নড়িয়া চড়িয়া বসিলেন, ভাবিলেন , এ কী নতুন আপদ আসিয়া হাজির হইল!
জল্পনা –আলাপন-বিবাদ চলিতে লাগিল সর্বত্র। তত্ত্বানুসন্ধানে কতিপয় সংবাদ প্রণেতা গণসেবকের দ্বারে আসিয়া উপণীত হইলেন, প্রকৃত সত্য উদঘাটন করিয়া দেশবাসীকে ভীতি মুক্ত করিবেন এই হইল তাহাদিগের সৎ প্রয়াস। সৎ প্রয়াস লইয়া তাহারা গণসেবকের নিকট উপস্থিত হইলে পর গণসেবক মহোদয় তাহাদিগের আগমনের হেতু উত্থাপন করিলেন।

জানিতে পারিয়াছি আপনি আফ্রিকা হইতে এক ভীতিকর জন্তু লইয়া আসিয়াছেন, সাংবাদিক কহিতে থাকিলেন, উহার বিষয়ে জানিতে ইচ্ছা করিতেছি। উহা কি প্রকারে বঙ্গ সীমায় প্রবেশ করল এবং ইহা প্রজাতন্ত্রের নাগরিকগণের  জানমালের কী পরিমাণ হানি ঘটাইতে সক্ষম-জানিতে ইচ্ছুক।

ভ্রম করিতেছেন, কহিলেন গণসেবক, ইহা আফ্রিকা বা আমাজানের জঙ্গল হইতে আমদানি হয় নাই। ইহা সম্পূর্ণ দেশীপণ্য। স্বদেশে আপনা আপনি গজাইয়া উঠিয়াছে, আমি কেবল ইহার পরিচর‌্যা করিতেছি।

ভাবিয়া দেখুন শত-সহস্র বৎসর হইতে প্রেজাতন্ত্রের মৃত্তিকায় স্বতঃসিদ্ধ হইয়া গজা্ইয়া উঠিতেছে ওষুধি বৃক্ষ সকল, বনে বাদারে জন্ম লইতেছে কত প্রাণী –জীব কূল; তাহারা আমাদিগকে কী না দিতেছে-মাংস, মাৎস, ওষুধ, বাহারি খাদ্য ও পানীয়।
‘জনগণ’ অর্বাচীনকালে আবিষ্কার হইলেও ইহার গুরুত্ব অপরিসসীম-।ইহা আমাদিগকে সকল বস্তু যোগাইয়া থাকে, ইহা স্বয়ং আহার করে অল্প-দান করে বেশি-ইহা শ্রেষ্ঠ আবিস্কার না হইয়া পারে না।

--কিন্তু কী করিয়া নিশ্চিত হইব যে উহারা প্রজাতন্ত্রের নিকট দুঃস্বপ্ন বলিয়া বোধ হইবে না। স্বচক্ষে দর্শন করিলে অনুধাবন করিতে সক্ষম হইতাম।
সংবাদ প্রণেতাগণের অনুরোধক্রমে গণসেবকের আদেশে একটি ‘জনগণ’ তাহাদিগের সম্মুখে আনীত হইলে পর সকল জনের চক্ষু তাহাকে নিরীক্ষণ করিতে লাগিল। অকস্মাৎ জনৈক সংবাদ প্রণেতা বলিয়া উঠিলেন, মনে পড়িয়াছে-ইহা হইল জনগণ-ইহার আবিষ্কারক গণসেবক মহোদয় নহেন –ইহার আবিষ্কারক হইল সংবাদ প্রণেতাগণ!
ভাবিয়া দেখুন এককালে জনগণ বলিয়া কোন প্রাণীকে প্রজাতন্ত্রবাসী চিনিতেন না, আমাদিগের পূর্বজ সংবাদ সংগ্রাহকগণ ইহা আবিষ্কার করিয়াছেন। আমরাই হইলাম ইহার আবিষ্কারক!

--অনুধাবনে ব্যর্থ হইলাম, কহিলেন গণসেবক মহোদয়
--অনুসন্ধান করুন অষ্টাদশ শতকের পূর্ববর্তী পত্র সমূহ, জনগণ কোন স্থানে মিলিবে না। অতঃপর কালের চাহিদা বিচার করিয়া ইহাকে বিশ্ববাসীর সম্মুখে আনিয়া হাজির করিয়াছি।  ইহা অসত্য না হইলে  কাহার দাবী অগ্রবর্তী হইবে?
কৃতিত্ব হস্তচ্যুত হইতেছে দেখিয়া গণসেবক বিপন্নবোধ করিলেন এবং বক্তৃতা করিয়া কহিলেন, বিষ্ণু সর্বদা ব্রহ্মার অধিক মর‌্যাদা পাইয়া আসিয়াছেন কারণ হইল পালন কর্তা জন্মদাতার অনুপাতে ক্ষুদ্র নহেন, ইহা যদি সত্য হইল তবে আমি অধিক কৃতিত্বের দাবীদার হইলাম।

মস্তিষ্ক খাটাইয়া দেখুন –জনগণ আপনারা আবিষ্কার করিলে তাহাকে পালন করিয়াছে কে? আমি প্রজাতন্ত্রের গণসেবক-জনগণের পালন কর্তা, তাহাকে তিল তিল করিয়া গড়িয়াছি; উহাকে খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসার অধিকার দিয়াছি কিন্তু কর্মের অধিকার দেই নাই। উপরন্তু সকল বিষয় সে স্বয়ং অর্জন করিয়া লইবে।
এবং তাহাকে সহায়তা করিয়াছি নানাবিধ প্রকারে-সর্বাগ্রে তাহাকে ভূমিহীন করিয়াছি, অতঃপর তাহাকে কর্মহীন করিয়াছি, তাইনা সে আজি উত্তম সেবক হইয়া পরকালের সুখ সন্ধান হেতু আমাদিগের সেবায় আত্মদান করিয়াছে।

--কিন্তুেউহা তো কেবল হাড়-চর্ম সার হইয়া উঠিয়াছে?
--কি করিব ওইরূপ না হইলে জনগণ হইল কী প্রকারে? উহাদিগকে তো সকল অধিকার দিয়াছি-অর্জন করিয়া না লইতে পারিলে কি করিব? গোশালায় বন্ধন করিয়া আম্র পত্র খাইতে দিব? তাহা হইলে আমার দর্শনের সহিত মিলিল না। কহিলেন গণসেবক, বুঝিলাম আপনাদিগকে বিষয়টি আরও খোলাসা করিতে হইবে।

গণসেবকের আজ্ঞা পাইয়া লেঠেলগণ শ্রম ক্লিষ্ট হইয়া একটি বংশ নির্মিত খাঁচা আনিয়া হাজির করিলেন-উহার অভ্যন্তরে কতিপয় প্রাণী অশান্তিসহ অবস্থান লইয়াছে এবং সুখ বা দুঃখ প্রকাশ হেতু কেবল প্যাঁক প্যাক করিতেছে ।
--গণসেবক মহোদয়, ইহা কী হইল? -ইহারা তো হইতেছে হংসশাবক , ইহাদিগকে কেন আনয়ন করা হইল! হংস শাবকগণ দুঃখ পাইয়া প্যাক প্যাক করিতেছে, উহাদিগকে ছাড়িয়া দিতে হইবে, আহা! হংস শাবকবৃন্দ—।
--আপনাদিগের চক্ষুরোগ কি প্রকারে হইল বুঝিতে অপারগ হইলাম, -মনোনিবেশ করিয়া নিরীক্ষণ করুন-

সংবাদ প্রণেতাগণ মনোনিবেশ করিয়া খাঁচা মধ্যে কতিপয় জনগণ দর্শন করিলেন, উহারা হংসশাবক সদৃশ বোধ হইলেও তাহারা হইল জনগণ। অতঃপর তাহারা আপনাদিগের ভ্রম অনুধাবন করিয়া মস্তক অবনত করিলেন। এবং জনগণ বংশ নির্মিত খাঁচা –বন্দী হইয়া 
প্যাঁকপ্যাঁক করিতে থাকিলেন।

আরো পড়ুন--



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন